মাদরাসায় কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, এলাকায় উত্তেজনা

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি |

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের শংকরকাটি সুন্নিয়া দাখিলা মাদরাসায় তিনজন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য মো. ফোরকান আলী শ্যামনগর সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু মামলা চলমান থাকার পরও সম্প্রতি মাদরাসার সুপার আকতার হোসাইন ও সভাপতি আব্দুল মাজেদ সরদারে যোগসাজেসে নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও মামলা চলমান থাকায় এ পদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশ না করার বিধান আছে। এ নিয়োগ ও মামলাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী এবং মাদরাসার সুপার ও সভাপতির লোকজনের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন মুহুর্তে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা এলাকাবাসীর।

মামলার বাদী ফোরকান আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, লকডাউন চলমান থাকায় ১৫ জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বা নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৬ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে, এর মধ্যে গত ৩০ জুন শ্যামনগর সহকারী জজ আদালতে মামলা হয়েছে। যার পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর। মামলা চলমান থাকায় নিয়োগে সুপারিশ না করার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, শংকরকাটি সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসায় পরিচ্ছনতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগে গোপনে স্বজন প্রীতি, দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে রেজুলেশন ছাড়াইনিয়োগ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। মাদরাসার সুপার আকতার হোসাইন ও সভাপতি আব্দুল মাজেদ সরদারের যোগসাজসে গোপনে কর্মচারী নিয়োগের পায়তারা ফাঁস হয়ে গেছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গত ৬ জুন এ পদগুলোতে নিয়োগে ডিজি প্রতিনিধির চিঠি প্রকাশিত হয়। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াছমিনকে ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়া হয়। প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠির ৮নং শর্তে বলা ছিল, নিয়োগ যোগ্য পদ ও কমিটি নিয়ে মামলা থাকলে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে না।


 
মামলার এজহারে আরও বলা হয়, এরপর গত ২৩ জুন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার ও শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেও কোন সুরাহ হয়নি। অনিয়ম, স্বজন প্রীতি ও আর্থিক লেনদেন করে মাদরাসার সভাপতির নাতি মোজাফফার হোসেনকে নিরাপত্তাকর্মী, সুপারের ভাইয়ের ছেলে হাবিবুল্যাহকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নাজমা বেগমকে আয়া পদে নিয়োগের বিষয়ে আগেই অভিযোগ করা হয়েছিল। এ নিয়োগ নিয়ে রেজুলেশন ছাড়াই প্রক্রিয়ায় বিরোধীতা করে কমিটির ৯জন সদস্য, সব শিক্ষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের স্বাক্ষরে অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

আদালতে করা মামলায় মাদরাসার সুপার, সভাপতি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, ডিজি মনোনীত প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা অফিসার, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ ১৬জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আদালতে মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় মামলার বাদী ও শিক্ষকদেরকে সুপার ও সভাপতি তাদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে কর্মচারী নিয়োগ হলে তা বাতিল করে সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার আকতার হোসাইন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ১৫ জুলাইয়ের পর নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সিটে ডিজি প্রতিনিধিসহ সবার স্বাক্ষর আছে। কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগ বোর্ড বা নিয়োগ পরীক্ষা কোথায়, কখন হয়েছিল বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। 

এদিকে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে মাদরাসার সভাপতি আব্দুল মাজেদ সরদারও নিয়োগ বোর্ডের বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি মামলার বিষয়টি জানিনা। জানলে নিয়োগ বোর্ড হতো না। বিষয়টি নিয়ে আমি ডিজি প্রতিনিধিকে বিষয়টি জানাবো। 

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ও এ নিয়োগে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মাহফুজা ইয়াসমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গত ১৬ জুলাই (শুক্রবার) সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের একটি মাদরাসায় নিয়োগ বোর্ড হয়েছিল। তবে এ ঘটনায় যদি নিয়োগ বোর্ডের আগে মামলা হয়ে থাকে তাহলে নিয়োগ বাতিল হবে। আর যদি নিয়োগ বোর্ডের পরে মামলা হয় তবে ঐ মামলা কার্যকর হবে না। 

মামলা গত ৩০ জুন হয়েছে বলে জানালে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি খুবই খারাপ হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024430751800537