মাদরাসায় না এসেই নিয়মিত বেতন তোলেন সভাপতির ভাগ্নি

বরিশাল প্রতিনিধি |

দীর্ঘ ১২ বছর মাদরাসায় না এসেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকা নাহিদা আক্তারের বিরুদ্ধে। তার হয়ে টাকার বিনিময়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন সুপার। একাজে সহযোগিতা করেন মাদরাসাটির সভাপতি ওই শিক্ষিকার মামা । ক্লাস রুটিনে নাম নেই এমনকি তাকে চিনেন না খোদ শিক্ষার্থীরাও। এমন অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি । 

১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার একবছর পর স্বীকৃতি পেয়ে এমপিওভুক্ত হয় বরিশাল সদর উপজেলার ৮নং চাঁদপুরা ইউনিয়নের ‘দূর্গাপুর হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদরাসাটি। বর্তমান সভাপতি আসাদুজ্জামান লিটনের বাবা হাজী মোবারক আলীর নিজ জমিতে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে শিক্ষার পরিবর্তে পরিণত হয়েছে একটি লাভজনক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। 

জানা যায়, একাধারে ১২ বছর ধরে মাদ্রাসার সভাপতি রয়েছেন আসাদুজ্জামান লিটন। তিনি সভাপতি হওয়ার পর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসায় নিয়োগ হয় তার আপন ভাগ্নি নাহিদা আক্তারের। তিনি মাদরাসায় যোগদান করেন ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল। যোগদানের পর থেকেও মাদরাসায় অনুপস্থিত থাকলেও সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন। মাদরাসা হাজিরা খাতায় তার নামে উপস্থিতির স্বাক্ষর করেছেন মাদরাসার সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন একাজের জন্য তিনি অর্থও পান নিয়মিত।  

অবৈধভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ, বিভিন্ন সময় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, টিউশন ফি’র টাকা জাল স্বাক্ষর দিয়ে একাউন্ট থেকে তোলা, ট্রেনিংয়ের সময় অফিস খরচের নামে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায়, নিয়োগবাণিজ্য, সিল জালিয়াতি করে টাকা উঠানো, প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রির মতো অভিযোগ রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে। 

এছাড়াও বিভিন্ন সময় আসা বরাদ্দের টাকা, সিডর বন্যার সময় আসা ত্রাণ সামগ্রীসহ সকল কিছু বণ্টন না করে ভোগ করার অভিযোগ আছে মাদরাসার সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে। 

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আসাদুজ্জামান লিটন এসব কিছুর সাথে জড়িত থাকলেও চাকরি হারানোসহ নানারকম হুমকি-ধমকির কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চাননা। যদিও তিনি মাদরাসার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অবৈধভাবে এবং কোনো নির্বাচন ছাড়াই। 

সুপার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক দেয়া হয়েছে এবং এর কোনো সত্যতা নেই। ক্লাস রুটিনে নাহিদা আক্তারের নাম না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আপনাকে এ বিষয়ে আগামী পরশু রুটিন দেখাতে পারবো।

সভাপতির নিয়োগবাণিজ্য, সিল জালিয়াতি করে টাকা উঠানো, প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রি বাবদ অর্থসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই; এটি তাদের বাড়ির সামনের এবং তাদের প্রতিষ্ঠান এখানে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। 

সভাপতি আসাদুজ্জামান লিটনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এরকম কোন কিছুই ঘটেনি। কোনো অনিয়ম এখানে হয়নি বরং আমি আমার পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে থাকি; এখানে কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়নি।

আর অবৈধভাবে তিনি কোনো নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আরও দশ বছর আগেই এ পদ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চেয়েছি। কিন্তু, তার জন্য যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে না পাওয়ায় আমিই এখনো দায়িত্ব পালন করছি। এটি আমার বাবার দেওয়া প্রতিষ্ঠান; সেজন্য আমরা একে দেখে রাখছি।

শিক্ষিকা নাহিদা আক্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের তিনজন আত্মীয় রয়েছেন। তার ক্লাস না থাকা বা অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আপনি সুপারের সাথে কথা বলেন; বা যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদের থেকে খোঁজ নেন। 

বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন বলেন, আমরা এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবো। কোনো অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনা থাকলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়মে চলবে এবং এটি কারো মনমতো চলতে পারে না; আমরা ব্যবস্থা নেবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003324031829834