মাদরাসায় ১৪ দিন ধরে তালা ঝুলছে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, নেত্রকোনা |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, নেত্রকোনা : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মনকান্দা এমইউ আলিম মাদরাসা অ্যান্ড বিএম কলেজে ১৪ দিন ধরে ঝুলছে তালা।

অধ্যক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রেখে উধাও রয়েছেন শিক্ষকরা। 

গত ১৪ দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এমন অচলাবস্থাতেও সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। জেলা শিক্ষা অফিস বলছে, তারা এ বিষয়ে অবগত হয়েছেন। দ্রুত সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেবেন।

সূত্র জানায়, গত ১৬ জানুয়ারি অধ্যক্ষ এ.এম.এম মুহিব্বুল্লাহর নানান অনিয়ম-দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীরা মাদরাসায় যান। এ সময়ে এলাকাবাসীর সাথে অধ্যক্ষের অসৌজন্যমূলক আচারণের ফলে বিক্ষুব্ধ হন তারা। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষকে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন এলাকাবাসী। পরে খবর পেয়ে কয়েকঘণ্টা পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও থানার পুলিশের সহায়তা অধ্যক্ষ মুক্ত হন।

এরপর থেকে মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা আসলেও অধ্যক্ষসহ বেশিরভাগ শিক্ষকরা আর আসছেন না। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসার মূল ফটকে তালা ঝুলছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ও দুইজন শিক্ষক মাদরাসা সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভেতরে যেতে পারেননি কেউই।

মাদরাসার নিরাপত্তা কর্মী জানান, ১৬ তারিখের ঘটনার পর মূল ফটক মাঝেমধ্যে খোলা থাকলেও এখন আর খোলা হয় না। কেন খোলা হয় না, জানতে চাইলে জবাবে তারা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সারাক্ষণ তালা দিয়ে রাখা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা জানান, দুর্নীতি-অনিয়মে ঝামেলা চলছে অধ্যক্ষের সাথে। অন্য কোন শিক্ষকদের সাথে তো কোন ঝামেলা নেই। তাহলে তারা কেন আসছেন না? তারা চান দ্রুত প্রতিষ্ঠানটি খোলে দেওয়া হোক, পাঠদান শুরু হোক। এভাবে পাঠদান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।

মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানান, তিনিসহ ৩ জনের বেতনভাতা বন্ধ করে রেখেছেন অধ্যক্ষ। তারা মাদরাসায় এলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেন না অধ্যক্ষ। তার বেতনভাতা বন্ধ ৪ মাস ধরে। জুনিয়র শিক্ষক সুলতানা পারভিনের বেতনভাতা বন্ধ ২০ মাস। অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের ২ বছর ধরে বেতনভাতা পান না।

সাইফুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ সিনিয়রিটি না মেনে অসদুপায়ে আবু সালেহকে সহকারী অধ্যাপকের বেতন স্কেল না দিয়ে জুনিয়র দুইজনকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করেছেন। এভাবে অত্যাচার ও নানান কূটকৌশল করে একজন নৈশ প্রহরীকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, মাদরাসায় অধ্যক্ষের ভাই-বোনসহ নিকটাত্মীয়দের চাকরি দিয়ে স্টাফদের মাঝে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার মতের সামান্যতম বাইরে গেলেই নানান ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাছাড়া অধ্যক্ষ মাদরাসার এক একর দশ শতাংশ জমি বিক্রি করে বিক্রয় লব্ধ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবৎ পকেট কমিটি দ্বারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন অধ্যক্ষ। ওই কমিটিতে অভিভাবক সদস্য যাদের রাখা হয়েছে, তাদেরকে তারা চেনেন না। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ এ.এম.এম মুহিব্বুল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উপাধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা মাদরাসায় গিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে রাজি আছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রাজিব হোসেন জানান, বিষয়টি দ্রুত নিরসনের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022737979888916