বগুড়ায় টেকসই জীবনমান গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের শিক্ষক মিলণায়তনে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা পেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সোমবার এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. বেল্লাল হোসেন ও প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রেজাউন নবী।
শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা পেশ করেন বগুড়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সংগঠনের উপদেষ্টা ড. মনসুর আহমেদ। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনায় সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের পথ-রেখার ১৬ টি সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, ফিরে আসা সৃজনশীল শিক্ষাক্রমের ত্রুটি উত্তরণে এখনই শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অনুপযোগি পাঠ্য বিষয় বাদ দিয়ে নতুন করে পাঠ্য বই প্রণয়ন করতে হবে, প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রশ্নপত্র তৈরি ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে আন্ত:প্রতিষ্ঠান মডারেশন পদ্ধতি চালু করা, শিক্ষকদের সর্বনিম্ন বেতন হবে নবম গ্রেডে, মাধ্যমিকের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য পৃথক আচরণ-শৃঙ্খলা বিধিমালা , শিক্ষকদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ও গভর্নিং বডি বাতিল করে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে, মাধ্যমিকের সকল উন্নয়ন প্রকল্প হতে হবে রাজস্ব বাজেট থেকে, শিক্ষা প্রশাসন হবে নিচ থেকে উপরি কাঠামোর, কোচিং সেন্টার বন্ধে আইন নয় বরং কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহণসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনাগুলোকে একটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হয়।
সংগঠনের সভাপতি মাসফিকুর রহমান বায়েজীদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আমাদের এই প্রস্তাবনা প্রচলিত প্রস্তাবনা থেকে ভিন্ন কারণ মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত সম্যস্যা চিহ্নিত করে সমাধনের পথ নির্দেশ করা হয়েছে। এই সংগঠন আগামীতে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জুলফিকার আলী বলেন, পাঠ্যপুস্তকের বিষয় এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় যা শিক্ষার্থীদের বয়স ও আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। ভুলে ভরা পাঠ্য বিষয় দেখার কেউ নেই। দেশের পণ্যের মান যাচাইয়ের জন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু ছেলে-মেয়েদের পাঠ্য বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে না।
সভার সভাপতি ড. বেল্লাল বলেন, দ্রুত শিক্ষা সংস্কার কমিশন করে এই প্রস্তাবনাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে জাতি পথ হারাবে। বাড়বে কোচিং ও গাইডের দৌরাত্ন। শিক্ষার সাথে অবশ্যই বাস্তব ভিত্তিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে।
প্রধান অতিথি প্রফেসর রেজাউন নবী বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক ও আন্তরিক। আন্ত সম্পর্কের মাধ্যমে শ্রেণি কক্ষের পাঠদান কার্যকর হবে। নীতি নৈতিকতার আলোকে শিক্ষকতা পেশাকে নিয়ে যেতে হবে সবার ওপরে।
আলোচনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সরকারি আজিজুল হক কলেজের গণিতের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, সরকারি শাহ এয়তেবারিয়া কলেজের ইংরেজির প্রভাষক নাহিদ নাজমা সুলতানা, সরকারি শাহ সুলতান কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ, ভাণ্ডারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো. মাকসুদুর রহমান বাপী, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. ত্বাইফ মামুন, সাবগ্রাম কুদরতিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম পিন্টু, বগুড়া সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বগুড়া সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ।