মানারাতে কোষাধ্যক্ষ পদে ঢাবি শিক্ষকের নামে ‘গায়েবি’ আবেদন

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ট্রেজারার পদে আবেদন না করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের নামে গায়েবি আবেদন জমা পড়েছে। সবশেষে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাকে লিখিত দিয়ে মুক্তি মিলেছে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে।

জানা যায়, সম্প্রতি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ট্রেজারার পদে নিয়োগ আবেদন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান আবেদন করেন। তবে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহসীন উদ্দীন মিয়া নিজে আবেদন না করলেও তার নামে আরেকটি আবেদনপত্র জমা পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে মূল কাগজপত্র চাইলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন এই অধ্যাপক। পরে ‘আমি আবেদন করিনি’ এই মর্মে গোয়েন্দা সংস্থাকে লিখিত দিতে হয়েছে ওই অধ্যাপককে।

এই জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের কাগজপত্র ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কে বা কারা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে এ নিয়ে বিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিভাগের একাধিক শিক্ষকের দাবি, চেয়ারম্যান ছাড়া এ কাজ করা অন্যদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য প্রার্থীকে সুবিধা দিতে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন এমন কাজ করতে পারেন বলে ধারণা তাদের। এ ঘটনা ঘটার পর অধ্যাপক ড. মুহসীন উদ্দীন মিয়া বিভাগের কম্পিউটারে সংরক্ষিত তার সব কাগজপত্র সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক বাহাউদ্দীন। এদিকে লিখিতভাবে জানালে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অধ্যাপক ড. মো. মুহসীন উদ্দীন মিয়া বলেন, ‘ট্রেজারার পদে আমি নিজে আবেদন করিনি। হঠাৎ আমার কাছে মূল কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাই। সর্বশেষ গোয়েন্দা সংস্থাকে (এনএসআই) লিখিত দিয়েছি যে আমি আবেদন করিনি। তবে কে বা কারা এ কাজ করেছে তা আমার জানা নেই। এ ঘটনায় সিনিয়র অধ্যাপক হিসেবে আমি বেশ বিব্রতবোধ করছি। এমন পরিস্থিতির জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, ‘সিনিয়র একজন অধ্যাপকের সঙ্গে এমনটি কখনই কাম্য নয়। অধ্যাপক আবদুস সবুর খান চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় এমনটি করতে পারেন। কারণ চেয়ারম্যান ছাড়া কারও পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। অন্য কোনো ক্যান্ডিডেট না থাকলে ভাইভা বোর্ড বসবে না এ কারণে তার অজান্তে এমন মানহানিকর কাজ করা হয়েছে।’

বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, ‘এ বিষয়টি বিভাগে ওপেন সিক্রেট। একজনের কাগজপত্র তার অনুমতি ছাড়া অন্যজন আবেদন করা নৈতিক স্খলন ও প্রতারণার শামিল বলে আমি মনে করি। আশাকরি বিষয়টির তদন্ত হবে এবং কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন বলেন, ‘তার নামে আবেদন অন্য কেউ করেছে কি না বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি নিজেই সাক্ষী তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লোকজন এসে কথা বলেছে। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না। তারা কাকে নেবে না নেবে এটা তাদের বিষয়। আমার সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ‘বিষয়টি খুবই বিব্রতকর। তার সম্মান নষ্ট করার জন্য কেউ এ কাজটি করেছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত করা যাবে যদি তিনি লিখিত অভিযোগ দেন। উপাচার্য বরাবর লিখিতভাবে বিষয়টি জানালেই নিশ্চয়ই তদন্ত হবে এবং যেই করুক তাকে বিচারের আওতায় আনা যাবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘একজনের আবেদন আরেকজন জমা দেওয়া খুবই অপ্রত্যাশিত। কেউ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এমন কাজ করেছে কি না তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তবে অধ্যাপক মুহসীন সততার পরিচয় দিয়েছেন।’

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দীন ও আবেদনকারী অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সবুর খান দুজনই গত বছরের ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক তিন বছরের জন্য বিভাগের পরীক্ষা-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার হন।

বহিষ্কৃত শিক্ষককে ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, অনেকের নাম আসতে পারে। সবকিছু বিবেচনা করেই নিয়োগ দেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023419857025146