মাভাবিপ্রবির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেকৃবিতে, শিক্ষক সমিতির ক্ষোভ

মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি |

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগের নির্বাচনী পরীক্ষা শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

জানা গেছে, মাভাবিপ্রবির বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগ এবং ফার্মেসি বিভাগে ৩ জন করে মোট ৬ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী ১৩ ও ১৪ আগস্ট সকাল ১০টায় শেকৃবির প্রশাসনিক ভবনে হবে এই পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় অংশ নেবে যথাক্রমে ৮১ ও ৯৫ জন প্রার্থী। 

এদিকে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। সমিতির নেতারা বলছেন, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অন্য স্থানে নেওয়া মাভাবিপ্রবির জন্য অমর্যাদাকর। এর পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এর ফলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। 

এর আগে গতকাল সোমবার মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় শিক্ষক সমিতি একটি অনুলিপি উপস্থাপন করেন। এতে মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মাসুদার রহমান স্বাক্ষর করেছেন।

অনুলিপিতে শিক্ষক সমিতি জানিয়েছে, মাভাবিপ্রবির নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের যথেষ্ট সুবিধা ও পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ঢাকাস্থ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন মাভাবিপ্রবির জন্য অমর্যাদাকর এবং এর পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। মাভাবিপ্রবির অবকাঠামোর বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন অযৌক্তিক এবং এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মাভাবিপ্রবির অবকাঠামোর ভেতরে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে শিক্ষকদের অবহিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভাইস-চ্যান্সেলরকে অনুরোধ করা হলো।

শিক্ষক সমিতি মনে করে, "২০২২ খ্রিষ্টব্দের ২৫ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফার্মেসী ও বিএমবি বিভাগে ১টি করে মোট ২টি সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যে ৪  জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা আইনত অবৈধ।

অনুলিপিতে আরো বলা হয়, “গত ২১ মার্চ শিক্ষকদের সাথে ভাইস চ্যান্সেলরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় কিছু সিধান্ত নেওয়া হয়। যা ভাইস-চ্যান্সেলরকে অবহিত করা হয়। যেখানে বলা হয়, প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাই পদ্ধতি সম্পর্কে স্ব-স্ব বিভাগের সকল শিক্ষকের মতামত একাডেমিক কমিটি হয়ে অনুষদের ডিন এর মাধ্যমে ভাইস-চ্যান্সেলর এর নিকট প্রেরণ করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিল ও রিজেন্ট বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।”

শিক্ষক সমিতি জানায়, বিভিন্ন বিভাগ ইতোমধ্যে তাদের মতামত ডিন অফিসের মাধ্যমে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের নিকট প্রেরণ করেছেন। এ বিষয়ে ভাইস-চ্যান্সেলর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে শিক্ষকবৃন্দ এখনও অবগত নন। শিক্ষক সমিতির গৃহীত সিদ্ধান্ত গুলোর বিষয়ে কী কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষকদের অবহিত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।”

এ বিষয়ে মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, উপাচার্য নিজের ইচ্ছেমতো নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে চাচ্ছেন। এর আগেও শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তবে উপাচার্য কোনো তোয়াক্কা করেননি। আমাদের ক্যাম্পাসে সুন্দর পরিবেশ থাকতেও অন্য ক্যাম্পাসে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে পরিস্কার নয়।

তিনি আরও বলেন, উপাচার্য তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে অন্য ক্যাম্পাসে পরীক্ষা আয়োজন করতে পারেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। মাভাবিপ্রবির অধিকাংশ শিক্ষকই এই নিয়োগের বিরোধিতা করছেন। তবুও উপাচার্য অন্য ক্যাম্পাসে পরীক্ষা আয়োজনের পায়তারা করছেন।

জানতে চাইলে মাভাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য আমরা শেকৃবিতে পরীক্ষা আয়োজন করেছি। এক ক্যাম্পাসের নিয়োগ পরীক্ষা অন্য ক্যাম্পাসে নেওয়া যাবে না—এমন কোনো লিখিত আইন নেই। শিক্ষক সমিতির পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ না পাওয়ার আশঙ্কায় তারা এর বিরোধীতা করছেন।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক সমিতির নেতারা প্রথম বর্ষ থেকেই তাদের পছন্দের প্রার্থী ঠিক করে রাখেন। অন্য ক্যাম্পাসে পরীক্ষা হলে এই প্রার্থীরা উত্তীর্ণ হতে পারবেন না বলে শঙ্কায় রয়েছেন সমিতির নেতারা। এছাড়া দুই বিভাগের পরীক্ষায় প্রায় দুই শতাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন। তাদের বসানোর জন্য আমাদের এখানে ভালো কোনো জায়গা নেই। এর আগেও দুইবার এই পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। মাভাবিপ্রবির ক্যাম্পাস একটু দূরে হওয়ায় চাকরির পরীক্ষাগুলোতে অনেকেই অংশগ্রহণ করতে চান না। অনেক প্রার্থী অনুপস্থিত থাকেন। পক্ষান্তরে ঢাকায় পরীক্ষা হলে আবেদনকৃত সব প্রার্থীই অংশগ্রহণ করেন। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য পরীক্ষা শেকৃবিতে নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য মাভাবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ২০২১ খ্রিষ্টব্দের ১৬ মার্চ প্রকাশিত হয়। তবে সেই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় নি। পরবর্তীতে ২০২২ খ্রিষ্টব্দের ২৫ মে নতুন করে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাভাবিপ্রবি প্রশাসন। সর্বশেষ সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

 

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036530494689941