মারা যাওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থীর পরিবার ভর্তির ১৮ লাখ টাকা ফেরত পেল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহর (২০) ভর্তি ফি ফেরত পেয়েছে তাঁর পরিবার। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তাঁর পরিবারের কাছে ভর্তি ফির ১৮ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।

আরিফ উপজেলার চম্পকনগর গ্রামে সৌদিপ্রবাসী জহিরুল হক ভূঁইয়ার ছেলে। তাঁর মা পারভীন ভূঁইয়াও স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে থাকেন। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে গত ২৮ আগস্ট রাতে দেশে ফিরে আসেন তাঁরা। আরিফ পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন। এ বছর ঢাকার গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পরিবারের অনেক স্বপ্নও ছিল আরিফকে ঘিরে। নৌকাডুবিতে আরিফের আকস্মিক মৃত্যু যেন পরিবারের সব স্বপ্নকেও ডুবিয়ে দিল।

নিহত আরিফের বাবা জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘২৭ আগস্ট সৌদি আরবের সময় বিকেল চারটায় নৌ দুর্ঘটনার খবর পাই। তখনো জানতাম না, আমাদের আদরের ধন এই নৌকায় ছিল। এভাবে আমাদের আশার প্রদীপ নিভে যাবে, মানতে পারছি না।’

২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার তিতাস নদের লইস্কা বিলে নৌকাডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে মেডিকেলশিক্ষার্থী আরিফও একজন। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাল্কহেডের মালিক, মাঝি, সহযোগীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহতের চাচা ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, ‘দুই মাস আগে রাজধানীর গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাতিজা আরিফ বিল্লাহকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন ও আশা নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি করানো হয়। আমাদের একটাই আশা ছিল, ভাতিজা চিকিৎসক হবে। ভাতিজা বেঁচে থাকলে আরও ৫০ লাখ টাকা খরচ করতাম। এতে কোনো দুঃখও থাকত না। এ নৌ দুর্ঘটনা আমাদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল।’

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরিফের বাবা ও দুই চাচা সৌদি আরবের দাম্মাম নগরে ব্যবসা করেন। মা–বাবা সৌদিপ্রবাসী হওয়ায় একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে আরিফের লাশ রাখা হয়। সৌদিপ্রবাসী মা–বাবা দেশে ফেরার পর ২৯ আগস্ট সকাল ১০টায় বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর নৌকাঘাট-সংলগ্ন স্থানীয় মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আরিফের জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে গ্রামের কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, নৌকা ডুবে যাওয়ার সময় আরিফ নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়েন। আরিফকে জাপটে ধরে অনেকেই বাঁচতে চেয়েছিলেন। শেষে তাঁর জীবনই যায় সবার আগে।

ছবি : সংগ্রহীত

নিহত আরিফের বাবা জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ও আশা ছিল। ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর জন্য শ্রম–ঘাম মাটি করে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলাম। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্য ছেলেকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। ২৭ আগস্ট সৌদি আরবের সময় বিকেল চারটায় নৌ দুর্ঘটনার খবর পাই। দুর্ঘটনার খবরটি ফেসবুকেও শেয়ার করি। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীও সৌদি আরবে ছিলেন। তখনো জানতাম না, আমাদের আদরের ধন এই নৌকায় ছিল। পরে নিকট স্বজনদের মাধ্যমে নৌ দুর্ঘটনায় নিজের সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ পাই। এভাবে আমাদের আশার প্রদীপ নিভে যাবে, মানতে পারছি না।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045428276062012