মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ‘পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ’ করেছেন, এমন অভিযোগ করে উদ্বেগ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) জাবি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব বশির আহমেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত সব রাষ্ট্রদূতের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে এই দেশের জনগণ। এই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ এবং একপাক্ষিক কর্মকাণ্ড অশোভন, গর্হিত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে বিবেচনা করা হয়।
সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্দিষ্ট একটি দলের পক্ষ অবলম্বন করে তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সে লক্ষ্যে নানা সময় বক্তব্য ও বিবৃতি দিচ্ছেন। গত বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিএনপির নিখোঁজ সাবেক এক নেতার বাসায় গিয়ে বিশেষ আলোচনা করেছেন।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, তিনি মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় অংশ নিলেও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গুম হওয়া সহস্রাধিক সরকারি কর্মকর্তার স্বজনদের কথা কর্ণপাত করেননি। এমনকি সেই স্বজনহারা ব্যক্তিদের উদ্যোগে গঠিত ‘মায়ের কান্না’ নামের সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেওয়া স্মারকলিপিও গ্রহণ করেননি মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেই সময় পিটার হাসের আচরণ ছিল অদায়িত্বসুলভ, অপেশাদারি এবং অংশত অমানবিক, যা ভিয়েনা কনভেনশনের (১৯৬১) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য অসৌজন্যমূলক এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের মাধ্যমে তার কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে নেতারা বলেন, সংবাদপত্রের মারফতে আমরা জানতে পারি, মায়ের কান্না নামের সংগঠনের নেতাকর্মীদের কথা না শুনে এবং তাদের স্মারকলিপি না নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্থান ত্যাগ করেন। যা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দ্বৈত আচরণের বহিঃপ্রকাশ। তিনি মুখে মানবাধিকারের কথা বললেও আদতে তিনি মানবাধিকার হরণের পন্থায় হাঁটছেন। বাংলাদেশের জনগণ কোনো রাষ্ট্রদূতের কাছে এমন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ আশা করে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের সচেতন জনগণ হতাশ হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতেরাও নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কথা বলছেন, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং স্বাধীন দেশের জনগণের জন্য অসম্মানজনক।
জাবি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নেতারা বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত সব রাষ্ট্রদূতের কাছে থেকে অধিকতর দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ কামনা করি। একইসঙ্গে যেসব বিদেশি শক্তি মানবাধিকারের অজুহাতে আমাদের স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে, তাদের বিষয়ে সরকারের সজাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার রক্ষায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গৃহীত নীতি আদর্শ ও কর্মপন্থাকে যথার্থ ও বাস্তবসম্মত বলে মনে করে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।