সম্প্রতি বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘকে (ইস্কন) ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট এবং জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইস্কন তাকে সাত দিনের মধ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ক্ষমা না চাইলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া ও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছে সংঘটি।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত "ইস্কন সম্পর্কে প্রচারিত বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন বক্তব্য ও সংবাদের প্রতিবাদ" শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ইস্কন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
বাংলাদেশ ইস্কনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, সম্প্রতি ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ইস্কনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অসত্য হুমকি এবং নিষেধাজ্ঞা আহ্বানের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তার বক্তব্য শুধু আমাদের সংগঠনকেই আঘাত করেনি, বরং এটি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি, সহনশীলতা এবং সামাজিক ঐক্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের অযাচিত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দেশের শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে অবহিত করতে চাই, তিনি যদি তার বক্তব্য পরিহার করে দুঃখ প্রকাশ করে জাতির কাছে ক্ষমা চান, তাহলে আমরা তাকে সাধুবাদ জানাবো। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, সম্প্রতি বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইস্কন বাংলাদেশকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়াচ্ছে। যেমন, দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসমূহে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে যে ছবি বা পতাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে, ইস্কনের কোনো নিজস্ব পতাকা নেই। যে পতাকাটি দেখানো হয়েছে, তার সাথে ইস্কনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ইস্কন বাংলাদেশ তার সব কর্মকাণ্ডে আইন ও শৃঙ্খলা মেনে চলে এবং বাংলাদেশে শান্তি, সহনশীলতা ও ধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার জন্য দৃঢ়নিষ্ঠ। তাই এসব গুজবের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক সংগঠনের বিরুদ্ধে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ইস্কন একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন।ইস্কন বাংলাদেশ বরাবরই সবার প্রতি মানবিক সহমর্মিতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা প্রচার করেছে এবং জাতীয় সম্প্রীতি ও ঐক্যের পক্ষে কাজ করেছে। সুতরাং, এসব মিথ্যা প্রচারণা শুধু বাংলাদেশ ইস্কনের ভাবমূর্তিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ইস্কনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে। আমরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার তীব্র নিন্দা জানাই।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তারা যেন এ ধরনের ভিত্তিহীন অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সহায়তা করে। সেইসাথে, যারা গুজব ছড়িয়ে অথবা ইস্কনকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইস্কনের সভাপতি শ্রী সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, কোষাদক্ষ শ্রী জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শ্রী বিমলা প্রসাদ দাস প্রমুখ।