যশোর মনিরামপুরে মায়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিয়েছেন লিখন চক্রবর্তী (১৬) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার গণিত পরীক্ষার দিন তার মায়ের মৃত্যু হয়। কিন্তু মা হারানোর শোক বুকে নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় লিখন।
জানা যায়, মনিরামপুর পৌর শহরের তাহেরপুর গ্রামের সন্তোষ চক্রবর্তীর একমাত্র ছেলে লিখন চক্রবর্তী। বাবা মায়ের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণে চলাফেরা করতো সে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে অংশগ্রহণ করেছে সে। মঙ্গলবার ছিল তার গণিত পরীক্ষা। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস মা মল্লিকা চক্রবর্তীর (৫২) লাশ বাড়িতে রেখে তাকে মঙ্গলবারের গণিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।
লিখনের বাবা সন্তোষ চক্রবর্তী জানান, সোমবার রাত অনুমান সাড়ে আটটার দিকে তার স্ত্রী মল্লিকা চক্রবর্তী মারা যান। দীর্ঘদিন তিনি স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন। তিনি আরও বলেন, তাদের পরিবারে তিনটি মেয়ে রয়েছে যারা সকলে বিবাহিত এবং লিখন তাদের একমাত্র ছেলে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নত চিকিৎসা করানোর পরও তিনি সহধর্মীনিকে আকড়ে রাখতে না পারায় শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন।
লিখন মনিরামপুর পৌর শহরের মনিরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, লিখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই ভাল ছাত্র ছিল এবং প্রত্যেক পরীক্ষায় সে প্রথমস্থান অধিকার করেছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মচারী এবং সহপাঠিরা তার আচার ব্যবহারে মুগ্ধ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায়ও সে ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করবে বলে তিনি আশাবাদি।
বোন মাধবী চক্রবর্তী জানায়, পরিবারে সকলের প্রিয় এবং ছোট ভাই লিখনের পরীক্ষা এখনো ৮টি বাকি রয়েছে। একদিকে মায়ের শোক কেনভাবেই পাশকাটিয়ে সইতে পাছিনা। অপরদিকে ভাইয়ের পড়া-লেখা এবং পরীক্ষা নিয়ে আমরা শোকে কাতর হয়ে পড়ছি।
মল্লিকার অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
মঙ্গলবার বিকেলে তাহেরপুর মহা-শ্মাশানে লিখনের মার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।