মিথ্যা মামলায় পাঁচ দিন কারাগারে ছাত্র

পটুয়াখালী প্রতিনিধি |

পটুয়াখালী বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরুরি ভর্তির রেজিস্টারে নাম তার অসিম চন্দ্র শীল (৩৫)। গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে বাউফল উপজেলা হাসপাতালে বুক, পিঠ ও মাথায় আঘাত নিয়ে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসক তাকে স্বাভাবিক ব্যথা বলে ভর্তি করেন। ভর্তি হয়েই তিনি হাসপাতালে অনুপস্থিত। কর্তব্যরত সেবিকা ও জরুরি চিকিৎসক হাসপাতালের শয্যায় না পেয়ে তাকে পলাতক হিসেবে রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন। অথচ এ ঘটনায় দুমকী থানায় অসীম চন্দ্র শীল ও তার বাবা রামরঞ্জন শীলের সাজানো মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন লোহার রডের আঘাতে তার ওপরের মাড়ির সামনের দুটি দাঁত পড়ে গেছে এবং তার সঙ্গে থাকা এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

৮ জানুয়ারি থানায় মামলাটির এজাহার নেওয়া হয়। এরপর তদন্ত না করেই দুমকী থানা পুলিশ ১ নম্বর আসামি মানবেন্দ্র শীল (২৮) নামের বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। এ মামলায় মানবেন্দ্র পটুয়াখালীতে পাঁচ দিন ধরে জেলহাজতে রয়েছেন। তার বাবার নাম নিত্যানন্দ শীল, মা মালতী রানী শীল। তারা দু'জনই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। অসীম চন্দ্র শীল বগা ইউনিয়ন গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন।

জানা গেছে, দুমকী উপজেলা সদরের রামরঞ্জন শীলের সঙ্গে একই বাড়ির নিত্যানন্দ শীল ও বিমল চন্দ্র শীলের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। নিত্যানন্দ ও বিমলের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নেওয়ার জন্য রামরঞ্জনের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে গত শুক্রবার বিকেলে মানবেন্দ্র ও অসীম শীলের হাতাহাতি হয়।

এ ঘটনায় রামরঞ্জন তার এজাহারে উল্লেখ করেন, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পাকা সড়কের ওপর সাক্ষী সুধীর শীলের ঘরের সামনে পৌঁছলে বিবাদীরা পথরোধ করে দা, রামদা, শাবল, রড দিয়ে তার ছেলে অসীমকে পিটাতে থাকে। একপর্যায়ে মাথায় বাড়ি দিলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার সামনের মুখের ওপরের পাটিতে পড়ে দুটি দাঁত ভেঙে যায়। পরে তার পকেটে থাকা এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। দুমকী থানা পুলিশ মামলাটি এজাহার করে ১ নম্বর আসামি মানবেন্দ্র শীলকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। এর পর আসামি নিত্যানন্দ, মালতী রানী, পংকজ চন্দ্র শীল পটুয়াখালী আদালতে হাজির হয়ে জামিন

প্রার্থনা করলে আদালত তাদের তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু দাঁত ভেঙে ফেলার অভিযোগের কারণে আদালত ছাত্র মানবেন্দ্র শীলের জামিন নামঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বলেন, ঘটনাটি দুমকীর। তাই অসীম বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হতে পারেন না। তবে বাউফলে আহত হলে ভর্তি হতে পারেন। কিন্তু তিনি মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন। তাকে রোগীর বিছানায় খুঁজে না পেয়ে জরুরি চিকিৎসক অসীমকে পলাতক হিসেবে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেছেন।

অসীমকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক তাসিমুল ইসলাম অসীম তার বুকে, পিঠে ও মাথায় তীব্র যন্ত্রণার কথা জানান। তবে অসীমের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এ বিষয়ে বগা ইউনিয়ন গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শাহিন বলেন, শুক্রবার সকালে মোবাইল ফোনে মাঠ কর্মকর্তা অসীম জানান তিনি অসুস্থ। তার তিন দিনের ছুটির প্রয়োজন। শাহিন তার অসুস্থতার কারণ জানতে চাইলে অসীম জানান, এলাকার একজনের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছে। দেখতে আসার প্রয়োজন নেই। তিনি তেমন অসুস্থ নন।

এ বিষয়ে অসীমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। বাদী রামরঞ্জন শীল জানান, তার ছেলের দুটি দাঁত ভেঙে দিয়ে এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় আসামিপক্ষ। দুমকি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন। মেডিকেল রিপোর্ট এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানার ওসি মেহেদি হাসান বলেন, দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। বাদীর দেওয়া এজাহার নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে সোপর্দ করেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057919025421143