মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা!

বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের বার্তা |

এবার কড়া প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বছরের পর বছর ধরে তাদের রক্ত চুষে খাচ্ছিলেন ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ পরিচয় দেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পুরনো পদ্ধতিতেই ঘুষ দাবি করলে গত ১১ নভেম্বর গণধোলাই দিয়েছিলেন মিনিস্ট্রি অডিটর পরিচয় দেওয়া সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুল আলম মাসুমকে। তার অপর নারী সহকর্মী শেখ নুরুন্নাহার পালিয়ে বেঁচেছেন। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ গণধোলাইয়ের খবর প্রকাশিত হয়। 

নিন্দনীয় ওই ঘটনায় শিক্ষা বিভাগে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন মনিরুল ও শেখ নুরুন্নাহার। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অভিযুক্তদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ডিআইএর পরিচালকসহ অনেকেই। মনিরুলের একই ক্যাডারের তিন সহকর্মীকে দিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়। সেই কমিটি আজ সোমবার কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি কলেজ ভেন্যুতে দশ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মশালা চলাকালে ঘুষ দাবি ও মনিরুলকে গণধোলাইয়ের ঘটনা তদন্তের নামে রক্ষা করতে যাবেন বলে জানা গেছে।

ডিআইএর পরিচালক ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক কাজী মো: আবু কাইয়ুম সাক্ষরিত এক আদেশে তদন্ত কমিটির তথ্য জানা যায়। অতি গোপনে করা কমিটি গঠনের আদেশ ডিআইএর ওয়েবসাইট কিংবা অফিসের কোথাও রাখা হয়নি। তবে, আদেশের কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে রয়েছে। 

নাম না প্রকাশের শর্তে চকরিয়ার দশটি প্রতিষ্ঠানের জনাবিশেক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। বাজার থেকে কেনা নতুন দড়ি নয় গরু বাঁধা পুরনো দড়ি নিয়ে। গত ১১ নভেম্বর ধোলাই দিয়েছিলাম মনিরুল আলম মাসুমকে। এবার দেবে তাকে রক্ষা করতে আসা তারই তিন জাতভাইকে। 

পরিদর্শনের আদেশাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, বছরের পর বছর তারা আমাদের রক্ত চুষে খেয়েছেন। মিনিস্ট্রি অডিটে এলেই এমপিওর টাকা দিতে হয়। এমন কুঅভ্যাস বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এমনকি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ডিআইএর এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনারা ঘুষ খান একটু কম করে খান।’ 

 ‘এবার বৈষম্যবিরোধী সরকার ক্ষমতায়। আর ঘুষ দেবো না। ঘুষ চাইলে গরুর দড়িতে বাঁধবো, যোগ করেন তিনি। 

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন ৩৭ হাজার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, নিরীক্ষা ও তদন্তের দায়িত্ব ডিআইএর। এখানে কর্মরত শিক্ষা পরিদর্শক ও সহকারি শিক্ষা পরিদর্শকরা মূলত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। কিন্তু সরকারি কলেজ থেকে বদলি হয়ে তারা যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন ডিআইএতে আসেন পরিদর্শক অথবা সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে তখন তারা নিজেদের পরিচয় দেন ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হিসেবে। শব্দের এই মারপ্যাঁচে ঘুষের রেট বাড়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো ব্যবহার করে আলাদা বিজনেস কার্ডও তৈরি করেন এই পরিদর্শক ও সহকারি শিক্ষা পরিদর্শকরা। তাদের মূল টার্গেট এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।       

পরিদর্শন, নিরীক্ষা ও তদন্ত করার জন্য মুহাম্মদ মনিরুল আলম মাসুম ও শেখ নুরুন্নাহারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ১১ থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত করতে বলা হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো : চকরিয়া সরকারি কলেজ, দিগর পানখালী উচ্চ বিদ্যালয়; বি, এম এস উচ্চ বিদ্যালয়, কাকারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বহদ্দর কাটা উচ্চ বিদ্যালয়, পালাকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পহরচাঁদ ফাজিল মাদরাসা, টেমুশিয়া মোহছেনিয়া ইস: দাখিল মাদরাসা, আরবিয়া মারুফিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা ও কচ্ছপিয়া উচ্চ বিদ্যালয়।    

এদিকে ঘুষ চেয়ে গণপিটুনির শিকার মুহাম্মদ মনিরুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তারই এক সহকর্মী মোহাম্মদ ওয়ায়েছ আল ক্বারনী মুন্সী। 

গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় জিডিটি দায়ের করা হয়। তাতে নিজের নিরাপত্তা চান ওয়ায়েছ আল ক্বারনী মুন্সী।

জিডিতে তিনি লেখেন, গত ২২ অক্টোবর শিক্ষা ভবনের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রশিক্ষণ চলাকালে মনিরুল আলম মাসুম অপ্রাসঙ্গিকভাবে আমাকে বলতে থাকেন ‘ক্বারনী, তুমি কামরুন ও সাদিয়াকে বদলি করে দাও। জবাবে বলি, আমি বদলি করার কে’? 

জিডিতে তিনি আরো বলেন, ‘পরক্ষণে মাসুম বলা শুরু করে আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা অপর সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক সাদিয়া সুলতানাকে বদলি না করে তিনি শান্তি পাচ্ছেন না। বিবাদী আরো বলেন, তোমরা কেউ পার পাবে না। ক্বারনী, তোমারে গুলি কইরা দিমু! তুমি জানো না আমি তোমার প্রতি কতো ক্ষ্যাপা। তোমারে আমি ছাড়মু না। তোমাদের একটারেও ছাড়মু না। প্রত্যেকটারে গুলি করমু। পিপড়ার মতো মারমু। সব কয়টারে গুলি কইরা মারমু। এভাবে কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। পূর্বেও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিবাদী মনিরুল আলম মাসুমের দুর্ব্যবহার করার অসংখ্য নজির রয়েছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং জীবননাশের আশঙ্কা করছি।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha অ্যাডহক কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ যেনো ধ্বং*সস্তূপ জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল - dainik shiksha জোরপূর্বক পদত্যাগে করানো সেই শিক্ষকের জানাজায় মানুষের ঢল শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় - dainik shiksha শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সারানোর এখনই সময় কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034358501434326