মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. গোলাম ওয়াদুদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তহবিল তছরুপ, অর্থ আত্মসাৎসহ বহু অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জমা দিয়ে ছিলেন শিক্ষকরা। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অধ্যক্ষ মো. গোলাম ওয়াদুদের নিয়োগও অবৈধ ছিল। অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়ে অধ্যক্ষ লাখ লাখ টাকা প্রত্যক্ষভাবে আত্মাসৎ করেছেন। তিনটি ফ্লাটের মালিক অধ্যক্ষ ওয়াদুদ। তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এছাড়া অধ্যক্ষের নানা অনিয়মর বিরুদ্ধে আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। সেই কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।
অধ্যক্ষ ওয়াদুদের নিয়োগ নিয়ে ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নিয়ম বহির্ভূতভাবে মো. গোলাম ওয়াদুদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করার অভিযোগ প্রমাণিত। এমপিও নীতিমালা (৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ প্রণিত মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত) বহির্ভূতভাবে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় অধ্যক্ষের নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি।’
আরও পড়ুন : অনিয়মের অভিযোগে মিরপুর কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অধ্যক্ষের নিজের নামে ৩টি ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ প্রমাণিত। অধ্যক্ষের নামে ডাকঘর ও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ থাকার অভিযোগ প্রমাণিত। কলেজ তহবিল থেকে অধ্যক্ষ নগদ পাঁচ লাখ টাকা নেন, যা আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য। কলেজ তহবিল থেকে অধ্যক্ষ নগদ তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কলেজ তহবিলের দুই লাখ টাকা হিসাবরক্ষক লরেন্স পলাশের কাছ থেকে অধ্যক্ষ গ্রহণ করেন, যা আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিধি বহির্ভুতভাবে দেয়া পারিতোষিকের বারো লাখ তেত্রিশ হাজার ৫৭ টাকা আদায়যোগ্য। নির্মাণ খাতে ব্যয়িত ছয় লাখ আশি হাজার টাকার টাকার ভাউচার গ্রহণযোগ্য নয় বিধায় তা আত্মসাৎ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে, নির্মাণ ও উন্নয়নখাতে আটান্ন লাখ বত্রিশ হাজার টাকা নির্মাণ ব্যয় ভাউচার অভিযোগ সম্পর্কে রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লিপি ফার্নিচার মার্টকে সতের লাখ চল্লিশ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলেও বিলটি চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়নি। দুইজন হিসাব রক্ষককে সম্মানী বাবদ দেয়া ১৬ হাজার টাকা আদায়যোগ্য।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, টি-২০ বিশ্বকাপের ব্যয়ের সাত হাজার তিনশত টাকার ভাউচার নেই, তাই তা আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য হবে। বিধি বহির্ভুতভাবে দশ লাখ সতের হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য। কলেজ কর্তৃক দখলকৃত সরকারি স্থাপনায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি বিহীন দুই লাখ ছিয়ানববই হাজার টাকা ব্যয় গ্রহণযোগ্য নয়। বিধি বহির্ভুতভাবে উনিশ লাখ আশি হাজার টাকার ফার্নিচার তৈরির কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। পনের লাখ চার হাজার টাকা আত্মসাৎ হিসেবে গণ্য।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষা সফরে ব্যয় হওয়া টাকার মধ্যে ছয় লাখ পয়তাল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাৎ গণ্য।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩১ মার্চ মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ব্যয় হওয়া আঠারো লাখ উনপঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয় নিয়ে বলা হয়েছে, এ টাকা ব্যয় গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা আত্মসাতের সামিল। তবে, শান্তি পতাকা বাবদ ব্যয়িত এক লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা বিধি মোতাবেক ব্যয় করা হয়নি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।