শিক্ষা ভবনের ভেতরেই এক বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষককে পিটিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চমান সহকারী সৈয়দ লিয়াকত। নানা নাটকীয়তার পর শিক্ষা ভবনের কোটিপতি কর্মচারী হিসেবে পরিচিত এই কেরানিকে বদলি করা হয়েছিলো নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজে। কিন্তু কর্মস্থলের পরিবর্তে শিক্ষাভবনেই সময় কাটাতে দেখা যেতো তাকে। সম্প্রতি ওই মুক্তিযোদ্ধা নিপীড়ককে ঢাকায় বদলির জোর সুপারিশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপিও সুপারিশ করেছেন লিয়াকতের পক্ষে।
শিক্ষা প্রশাসনের অনেকেই বলছেন, নানা অপকর্ম করার পরও প্রভাবশালী দুই নেতার জোর সুপারিশ লিয়াকতের প্রভাব ও প্রতিপত্তিরই প্রমাণ। খুঁটির জোর তাকে শিক্ষা প্রশাসনে আরও বেপরোয়া করে তুলবে।
প্রসঙ্গত, ঘুষ নিয়েও কাজ করে না দেয়ায় প্রতিবাদ জানানোয় অবসরপ্রাপ্ত এক মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় গত এপ্রিলে। সহকর্মীদের সামনেই তাকে বেধড়ক পেটান সৈয়দ লিয়াকত। সে খবর প্রকাশিত হয় দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তায়। কিন্তু, সে সময়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশে ছিলেন না। কোনো শিক্ষক বা সংগঠন ওই ঘটনায় লিয়াকতের বিচার দাবি করে বিৃবতিও দেয়নি। যেহেতু লিয়াকতের হাতে এমপিওর ফাইল থাকে, প্রায় সব শিক্ষক নেতা বদলি ও এমপিওর তদবির করতে শিক্ষা ভবনে যান, তাই নিজ নিজ স্বার্থে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন সবাই।
তবে দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিবেদন নজরে পড়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেন মহাপরিচালক। কিন্তু অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার গাড়িমসিতে মহাপরিচালকের নির্দেশের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। এতে ক্ষুব্ধ হন মহাপরিচালক। গত ২৮ জুন দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘শিক্ষাভবনে শিক্ষক লাঞ্ছিত : লিয়াকতের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মহাপরিচালক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার দুদিনের মাথায় ৩০ জুন ওই বিতর্কিত কর্মচারীকে নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজের প্রধান সহকারী হিসেবে বদলি করা হয়।
কিন্তু নতুন কর্মস্থলে খুব কমদিনই অফিস করেছেন প্রভাবশালী লিয়াকত। অধিকাংশ কর্মদিবসে শিক্ষা ভবনের ক্যান্টিনে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চাশিক্ষার ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ে দেখা গেছে তাকে।
সম্প্রতি তাকে ঢাকার কোনো সরকারি কলেজে বদলির সুপারিশ করেছেন দুই সংসদ সদস্য শাজাহান খান ও মির্জা আজম। কিন্তু শিক্ষাভবন কেন্দ্রিক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ আছে লিয়াকতের বিরুদ্ধে। লিপা সাপ্লাইয়ার্স নামে এক আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে শিক্ষার বিভিন্ন প্রকল্প ও দপ্তরে জনবল সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয়ের অভিযোগ অনেক পুরনো। ওই কোম্পানির স্বত্ত্বাধীকারীও তিনিই। নিজের ফার্ম থেকে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পে নিজের লোকও নিয়োগ দিয়ে থাকেন তিনি। এমনই একজন অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের আউটসোর্সিং কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, লিয়াকত স্যারের ফার্মের মাধ্যমে আমি চাকরি পেয়েছি। প্রতি মাসে ১৭ হাজার টাকা বেতন আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়।
তাই বদলি চেষ্টা সফল হলে শিক্ষাভবনে ‘লিয়াকত সিন্ডিকেট’ আগের চেয়েও প্রভাবশালী হয়ে ওঠার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।