কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্ত্তী ও স্থানীয় চেয়ারম্যানরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। অফিস না করেই বাস ভবনে বসে বিভিন্ন প্রকল্প ভাগ বন্টন, ফাইলে স্বাক্ষর করা নিয়ে এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ইউএনও-জনপ্রতিনিধিদের মাঝে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ হলরুমে মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ফলে সভাটি পন্ড হয়েছে।
কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইউএনও অমিত চক্রবর্ত্তী মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা চলাকালে সবার উপস্থিতিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘আপনি হজ্ব করে আসছেন। হজ্ব কইরা কি হয়?’ এ কথার প্রতিবাদ করলে তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, তুই বেশি কথা বলিস। রুম থেকে বের হয়ে যা। তিনি মারার জন্য তেড়ে আসেন। গালিগালাজ করেন। এ সময় আনসার সদস্যদের হুকুম দেন, আমাকে গ্রেফতারের জন্য।
মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, টিআর-কাবিখাসহ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীতে ইউএনও স্বেচ্ছাচারিতা করেন। তিনি অফিস না করেই তার বাস ভবনে বসে অফিস করেন এবং সকল ফাইলে স্বাক্ষর করেন। এলাকার সাধারণ মানুষ ইউএনওর সঙ্গে দেখা করতে এসে না পেয়ে ফেরত যান। এতে সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সরকারের মুজিব শতবর্ষের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। এছাড়া মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিস না করার বিষয়টি তুলে ধরলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভায় উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইউএনও অমিত চক্রবর্ত্তী ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি হজ্ব ও হাজিদের নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। আমরা ইউএনওকে থামানোর অনেক চেষ্টা করেছি। এরপরও তিনি থামেননি। উল্টো তিনি মাসিক সভা শেষ না করেই বের হয়ে যান।
মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভার সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ইউএনও কাজটি মোটেও ঠিক করেননি। সভা থেকে ইউএনও বের হয়ে যাওয়ার অনেক পরে সভা স্থগিত করা হয়।
জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্ত্তী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কাউকে নিয়ে আমি কোনো কটাক্ষ করি নাই। এটা চেয়ারম্যানের মনগড়া কথা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যানরা আমার সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেন না। তাদের ডেকে ও চিঠি দিয়েও অফিসে হাজির করতে পারি না। ফলে সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এই বিষয়গুলো মাসিক সভায় তুলে ধরলে কোদালকাটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।