সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা। তিনি ছিলেন মার্কিন ইতিহাসের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ফার্স্ট লেডি। তবে ফার্স্ট লেডি পরিচয় ছাপিয়ে তিনি একাধারে একজন লেখক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী। বিশেষ করে সামরিক পরিবার ও কর্মজীবী নারীদের সহযোগিতা করায় তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ইস্টার্ন কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন মিশেল।
স্নাতক হওয়ার জন্য অনেক কিছু অতিক্রম করতে হয়—উঁচু-নিচু পথ, জয়-পরাজয়, চ্যালেঞ্জ, স্বপ্নভঙ্গ। আমি শুধু আপনাদের মধুর জীবন সম্পর্কে বলছি না। আমি সেই সব কাগজপত্রের কথা বলছি, যেগুলো অর্জনে আপনি আপনার হৃদয় ঢেলে দিয়েছেন; ওই সমস্ত ক্যাফেইন পোড়ানো রাত জাগার কথা বলছি।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
আপনাদের মধ্যে হয়তো কেউ কেউ এমন জায়গা থেকে এসেছেন, যেখানে অনেক বাচ্চাকে কলেজে পাঠানো হয় না। এখানের অনেকে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের খরচ মেটাতে ফুলটাইম কাজ করেছেন। আবার হয়তো এমনও আছেন, যাঁরা তাঁদের পরিবারের প্রথম গ্র্যাজুয়েট! আমি যখন কলেজে ভর্তি হই, তখন সবকিছুই আমার জন্য নতুন ছিল। এত বড় ক্যাম্পাস, এত মানুষজন—সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলাম। আমি জানতামও না যে কীভাবে নিজের ডর্ম রুম সাজাতে হয়। আশপাশের সবাইকে দেখছি সবকিছু সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছে। কিন্তু আমার ব্যাগ খুলে দেখি আমার কাছে সঠিক সাইজের বিছানার চাদর পর্যন্ত নেই। প্রথম বর্ষ আমি সেই বেসাইজের চাদর দিয়েই কাটিয়ে দিয়েছি।
কোনো কিছুর সঙ্গেই আপস নয়
আমার মতো পরিবার থেকে যারা আসেন তাদের অনেক কিছুর সঙ্গে আপস করে নিতে হয়। আপনি যা পেয়েছেন, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন। কোনো অজুহাত তৈরি না করে কঠোর পরিশ্রম করুন। যেটা শুরু করেছেন, সেই কাজ শেষ না করে উঠবেন না। এবং যা-ই হোক না কেন, যদি কারও কখনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে তার দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিন। আমার মা-বাবা আমাকে উপহার দিয়েছিলেন তাঁদের মূল্যবোধ। আর আমি এটা খুব দ্রুতই বুঝতে পেরেছিলাম যে এই মূল্যবোধই অর্থের চেয়ে অনেক মূল্যবান। কারণ কলেজে ওঠার পর আমি এই মূল্যবোধ নিজের পড়াশোনায় কাজে লাগিয়েছি, এমন কিছু নতুন দক্ষতা অর্জন করেছিলাম, যা সারা জীবন আমার কাজে লেগেছে। আমি যেসব জিনিস নিয়ে হোঁচট খেয়েছি এবং ভুল পদক্ষেপ নিয়েছি, সেগুলোকে প্রেরণার উৎসে পরিণত করতে শিখেছি। কোনো প্রফেসর ধমক দিলেও তা আমাকে নিরুৎসাহিত করতে পারেনি, বরং আরও বেশি প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ দুইটি প্রশ্ন
আপনার যেই মূল্যবোধ, প্রতিভা ও দক্ষতা আজকে আপনাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, তা কখনই হারাবেন না। আপনাদের সবার মনেই একটি প্রশ্ন, তা হলো এরপর কী হবে? আমি জানি আপনারা সবাই স্থির করে নিয়েছেন এরপর কী করবেন। এরপরেও আমি আপনাদের কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।
প্রথমত, আপনি কী হতে যাচ্ছেন?
আপনি কীভাবে প্রতিদিন আপনার জীবনযাপন করার পরিকল্পনা করছেন? আপনি যদি আপনার পছন্দের চাকরিটি না পান, তখন কী করবেন? আমাদের মনে রাখা উচিত যে প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্তগুলো আমাদের সংজ্ঞায়িত করে—সেই সময়গুলো আমাদের উপলব্ধি করায় যে আমরা কী হতে যাচ্ছি? আপনার পরাজয়ের মুহূর্তগুলোই আসল আমিকে চিনতে শেখায়, ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা দেয়। দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনি যে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করেছেন, সেগুলো অন্যদের সেবা করার জন্য কীভাবে ব্যবহার করবেন?
অনেকেই হয়তো স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অনেক জায়গায় কাজ করছেন। গ্র্যাজুয়েট হয়ে যাওয়ার পরে এ কাজ থেকে সরে গেলে চলবে না। দেশের প্রতি সবারই একটা দায়িত্ব আছে। নিজের চারপাশে একবার তাকান, দেখুন কাদের সাহায্যের প্রয়োজন। হয়তো নিজের চারপাশটা আবর্জনামুক্ত করলেন, কিছু ছেলেমেয়েকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়ালেন–কাজগুলো আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও, আদতে ছোট নয়। নিজ সিদ্ধান্ত নিয়ে গর্ব করুন, কখনো নিজের ক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান হবেন না। বুক ফুলিয়ে রাস্তায় চলুন, সেটা আপনাকে যেই প্রান্তেই নিয়ে যাক না কেন। আর নিজের ইতিবাচক মূল্যবোধগুলো অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিন। কারণ আগের চেয়েও আমাদের এখন মূল্যবোধ শিক্ষা অনেক বেশি জরুরি। (সংক্ষেপিত)
সূত্র : ওবামা হোয়াইট হাউস আর্কাইভ