বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি, এমএস অথবা এমফিল কোর্সে থাকছে না কোর্স আউট প্রথা। একজন উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী চিকিৎসক কোর্সে ফেল করলেও তিনি বারবার কোর্সে প্রবেশে পরীক্ষা দিতে পারবেন। এর আগে রেসিডেন্সি কোর্সে ৮ বার পরীক্ষা দেয়ার পর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী সেই প্রার্থীকে কোর্স আউট করে দেয়া হয়েছে।
বিগত সরকারের সময়ে ভিন্ন মতের চিকিৎসকদের নানাভাবে কোর্স আউট করে দেয়া হতো। পরীক্ষায় ইচ্ছা করে ফেল করানো হতো, এমনো ঘটনা ঘটেছে এডমিট কার্ড নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলেও ওই প্রার্থীকে পরীক্ষার হলেই ঢুকতে না দিয়ে পরে কোর্স আউট করে দেয়া হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স আউট হয়ে যাওয়া চিকিৎসকরা গতকাল অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিল সভা চলাকালে জড়ো হয়ে বিগত বছরের চাকরির সময়কালকে ট্রেনিং পিরিয়ড ধরে এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের ডিগ্রিকে আমলে নিয়ে এমডি, এমএস ও এমফিল কোর্সে সরাসরি ফেজ-বিতে প্রবেশের সুযোগ দাবি করেন।
১৮ বছরের চাকরিকালকে ট্রেনিং পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে সরাসরি ফেইজ-এ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও ডিপ্লোমাধারীদের প্রোমার্জনা করে সরাসরি ফেইজ-বিতে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়ার দাবি তোলা হয়। জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলে বঞ্চিত চিকিৎসকদের দাবিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয় এবং পরবর্তী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে তাদের দাবি উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা: মো: নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন। গতকালকের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এম ডি, এমএস ও এমফিল কোর্সে পূর্বে চর্চিত ‘কোর্স আউট’ প্রথা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় বলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান।
এ ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ভাতা হিসেবে বিসিএস চাকরিতে প্রবেশের সময় চিকিৎসকরা যে ভাতাটা পায় সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপনেরও সিদ্ধান্ত হয়। তবে ট্রেনিং বাদ দেয়ার এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র কিছু চিকিৎসক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, ‘একটা চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনিতেই বদনাম হয়ে গেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘বিগত প্রশাসনের সংকীর্ণ মানসিকতা ও দলবাজির কারণে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই শিক্ষা ও চিকিৎসার মানের অবনতি ঘটেছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণা হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু বিগত প্রশাসনে কাক্সিক্ষত মানের গবেষণা হয়নি।
মৌলিক গবেষণা না হলে চিকিৎসাও উন্নতমানের হবে না। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় এখন যদি যথাযথ ট্রেনিং না নিয়েই কোর্সে প্রবেশ করতে দেয়া হয় তাহলে চিকিৎসা শিক্ষার মানের আরো অধোগতি হবে।’ সিনিয়র চিকিৎসকরা জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত সময়ে ইচ্ছা করে ভিন্নমতের চিকিৎসকদের কোর্স আউট করে দেয়া হয়েছে এটা সত্য। এটার ক্ষতিপূরণ অন্যভাবে হতে পারে তবে তা কখনোই ট্রেনিং বাদ দিয়ে উচিত হবে না বলে জানান।’