মেধাসম্পদ সংরক্ষণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আজ বিশ্ব মেধাস্বত্ত্ব দিবস। প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক কিংবা কপিরাইট আমাদের জীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে এবং সৃষ্টিশীল মানুষজন ও বিজ্ঞানীদের কাজ কীভাবে আমাদের সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখছে—এসব বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে ওয়ার্ল্ড ইন্টালেকচুয়াল প্রোপার্টি অরগানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সাধারণ পরিষদে এই দিবসটি উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিবসটি পালনের জন্য ২৬ এপ্রিল তারিখটি বেছে নেওয়া হয়, কারণ হলো, ১৯৭০ সালের এই দিনে ডব্লিউআইপিওর জন্ম হয়েছে। প্রতি বছরই দিনটির সঙ্গে চমত্কার একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। ২০২১ সালের বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবসের প্রতিপাদ্য। সোমবার (২৬ এপ্রিল) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে মেধার মূল্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের দেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল, তখন আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ কম ছিল, জনসংখ্যা ছিল অর্ধেক; এর ওপর আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম না। আজ জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি, আবাদযোগ্য ভূমির পরিমাণ নিশ্চয়ই অনেক কম কিন্তু তারপরও খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি শুধু কঠোর পরিশ্রমের জন্য নয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুতসই ব্যবহারের জন্য, যা আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রমে মেধা খাটিয়ে আবিষ্কার করেছেন। তাদের এই মেধার স্বীকৃতি আমরা কী দিয়েছি? বিদেশে তৈরি সফটওয়্যারের জন্য অর্থ ব্যয়ে আমাদের আপত্তি নেই, অথচ দেশে তৈরি সফটওয়্যারের জন্য অর্থ ব্যয় করতে আমাদের অনীহা। যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী মানুষ জন্মায় না। আমাদের দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান দেশে যোগ্য স্বীকৃতি না পেয়ে। তবে মনে রাখতে হবে, একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞানভিত্তিক সমাজে, বিশ্বায়নের যুগে, প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে এ দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সা, শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান কাঠামো তৈরির বিকল্প নেই; ঠিক তেমনি জ্ঞানকর্মীদের দেশে ধরে রাখার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা, সর্বোচ্চ সম্মান ও প্রণোদনার ব্যবস্থাও করতে হবে।

মেধাস্বত্ব অধিকার (Intellectual property right) এমন একটি আইনি অধিকার যার মাধ্যমে শিল্প, বৈজ্ঞানিক, সাহিত্যিক এবং শৈল্পিক ক্ষেত্রে কোনো একটি মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মূল ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা পক্ষ সেই সৃষ্টিকর্ম ব্যবহার করতে পারবে কি না, কিংবা কী শর্তে ব্যবহার করতে পারবে—সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ঐ মূল ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে একক ও অনন্য অধিকার প্রদান করা হয়। 

মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় সবার সচেতনতা দরকার। সৃজনশীল শিল্পসত্তার আজীবন মূল্যায়ন, রয়্যালটি সংগ্রহ ইত্যাদি করে থাকে কপিরাইট। বাংলাদেশে সঠিকভাবে কপিরাইটের সদ্ব্যবহার করতে পারলে তা দেশের বাণিজ্যিক বৃদ্ধি ও সরকারি রাজস্ব আহরণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রয়্যালটি আদায়ের ক্ষেত্রে সিএমও-ই প্রধান ভূমিকা পালন করে, যা সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই ভাবে পরিচালিত হয়। সিএমওর প্রধান কাজ হচ্ছে কপিরাইট হোল্ডারদের লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে রয়্যালটি আদায় করা এবং তাদের মধ্যে রয়্যালটি বিতরণ করা। দেশে সৃজনশীল কাজগুলোর কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে তরুণদের ভূমিকা বেড়েছে। সৃজনশীল কাজের উদ্ভাবক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই এখন বেশি।

বর্তমান বিশ্বে বস্তুগত সম্পদের পাশাপাশি মেধাসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে এই মেধা সম্পদ বা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি’ নিয়ে বড় বড় কোম্পানির মধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আইনি লড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলছে। উদাহরণস্বরূপ, আইওএস-অ্যান্ড্রয়েড বিষয়ে অ্যাপল-স্যামসাং পেটেন্ট যুদ্ধ এবং অ্যান্ড্রয়েডে জাভা ব্যবহার নিয়ে গুগল-ওরাকলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি মামলা ইত্যাদি। বৌদ্ধিক সম্পত্তি সুরক্ষার ক্ষেত্রসমূহ হলো পেটেন্টস, কপিরাইট এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য অধিকার, ট্রেডমার্ক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, ভৌগোলিক সূচক এবং অন্যায্য প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে সুরক্ষা। বৌদ্ধিক সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত এই পরিভাষা/শব্দ নিয়ে প্রায়শই আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ি। সমগ্র বিশ্বে সমালোচনার বিষয় এখন ডিজিটাল মিডিয়া এবং ব্রডকাস্টিং অরগানাইজেশন। কপিরাইট সুরক্ষিত কনটেনট ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি কপিরাইট স্বত্বাধিকারীর (লেখক, নিউজ পাবলিশার্স, গীতিকার, সুরকার, প্রোডিউসার, আরো অনেকেই) অনুমতি এবং লাইসেন্সিংয়ের চর্চা সিএমওর মাধ্যমে কার্যকরকরণ কপিরাইট স্বত্বাধিকারীদের জন্য ব্যাপক সুবিধা করে তুলছে। কিন্তু প্রতিটি কপিরাইট কর্মক্ষেত্রে একটি করে সিএমও কাজ করে থাকে, যার মনিটরিং করে থাকে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।


সৃজনশীলতা সব মানুষের মধ্যেই আছে। কেউ তা ব্যবহার করেন, কেউ করেন না। যারা সৃজনশীলতাকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন, তারাই এগিয়ে যান। কপিরাইট আইন সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। যারা সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই এ আইনের অংশীজন। আমাদের অর্জিত মেধাসম্পদ অন্য কেউ দাবি করলে আমরা সাধারণত আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাই না। আমাদের এ মনোবৃত্তি পরিহার করতে হবে। মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026040077209473