দেখতে দেখতে বাঙালির প্রাণের বই মেলার ৮ম দিন পার করেছে। ধীরে ধীরে পাঠক-লেখক ও প্রকাশকদের কলকাকলিতে মুখর হতে শুরু করেছে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতিদিন কোন না কোন স্টলে দেখা মিলছে নতুন লেখকদের বই। বই মেলার প্রাণ এসব উদীয়মান লেখকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা কিংবা অটোগ্রাফ দিয়ে প্রচার করছেন নিজের নতুন বইয়ের।
প্রতিদিন প্রায় ৫০-এরও অধিক নতুন লেখদের বই আসছে মেলায়। তবে এতোসব উদিয়মান লেখদের ভিড়ে একটুও নিজেদের আধিপত্য হারায়নি পুরাতন লেখকরা। কোন ধরণের অটোগ্রাফ বা প্রচারণা চাড়াই সমানতালে বিক্রি হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখকদের বই।
প্রকাশকরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে এখনো নতুনদের থেকে ঢের এগিয়ে পুরাতন লেখকরা। সাহিত্যানুরাগীরা হুমায়ূন-বঙ্কিমচন্দ্রদের ছাড়া নতুন কাউকে এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। তাছাড়া এসব লেখকদরে বইয়ের প্রতি আগ্রহ আছে সব বয়সী মানুষের। ফলে বাজার কাটতিতেও এসব লেখকদের বইয়ের চাহিদা বহুগুণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অন্যপ্রকাশ, কাকলী, অনুপম, অন্বেষা- এ রকম পরিচিত প্রকাশনীগুলোর স্টলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এসব প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, বিক্রিতেই পুরাতন লেখকদের বই এগিয়ে। বিশেষ করে অন্যপ্রকাশের সামনে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে পাঠক-দর্শনার্থীদের হুমায়ূনের বই কেনার দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। এই প্যাভিলিয়নে বৃষ্টি বিলাস, মাতাল হাওয়া, নীল মানুষ, সে আসে ধীরে, এপিটাফ, এই বসন্তে, নক্ষত্রের রাত- এসব বই আছে বিক্রির শীর্ষে। বিশেষত হুমায়ুন আহমেদ, রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমদের সাহিত্যানুরাগীদের ভীড় যেন দোকানে লেগেই থাকে ।
মিজান পাবলিসার্সয়ের বিক্রয়কর্মী প্রত্যয় পাল বলেন, স্টলে সাহিত্যের বইগুলোর চাহিদা বেশি। এরমধ্যে পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে শরৎচন্দ্র, বঙ্কিম এবং রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যগুলো। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু কবিতার বইয়েরও চাহিদা রয়েছে ।
কাকলী প্রকাশনীতে হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠ হিমু, শ্রেষ্ঠ মিসির আলি, শ্রেষ্ঠ হুমায়ূন- এসব বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এই প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মী আবিদ বলেন, হুমায়ূন আহমেদের বই এতো বেশি বিক্রি হয় যে নতুন লেখকদের কোনো পাত্তাই নেই। এ ছাড়া অনুপম প্রকাশনীতে চক্ষে আমার তৃষ্ণা, অয়োময়, দারুচিনি দ্বীপ, রূপালী দ্বীপ, সায়েন্স ফিকশন গল্পসমগ্র এবং অন্বেষা প্রকাশনীতে রূপা, হিমুর হাতে কয়েকটি নীল পদ্ম, সে ও নর্তকী, তন্দ্রাবিলাস, অমানুষ, নির্বাসন বইগুলো হুমড়ি খেয়ে কিনছেন পাঠকরা। এছাড়া জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশনের চাহিদাও রয়েছে বলে জানান তিনি ।
কাকলী প্রকাশনীর স্টলের সামনে হুমায়ূন আহমেদের বই দেখেছেন সামিয়া সুলতানা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে আসা এই বইপ্রেমী জানান, হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রতি তার অনুরাগ অনেক আগ থেকেই। আজকে নিজের প্রিয়জনকে বই গিপ্ট করবেন বলে বইমেলায় আসা তার। সেজন্যই কাকলি প্রকাশনীর স্টলের বইগুলো নেড়েছেড়ে দেখছেন তিনি।
পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সুলতান মাহমুদ শুভ বলেন, নতুন লেখদের সাথে তাল মিলিয়েই চলছে পুরাতন লেখকদের বই বিক্রি। পুরাতন লেখকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের বইয়ের চাহিদা কিছুটা বেশি রয়েছে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।