বিহারি পল্লিতে উচ্ছেদ অভিযান করায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়ে আবেদনের শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন চেম্বার জজ আদালত।
আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আদেশের বিষয়টি বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন বিহারিদের আইনজীবী সগির হোসেন লিওন।
তিনি বলেন, আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত কোন আদেশ না দিয়ে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) আপিল বিভাগের বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান এর চেম্বারজজ আদালত এ আদেশ দেন।
চেম্বার জজ আদালতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
অন্যদিকে,বিহারিদের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তার সাথে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন লিওন।
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি মিরপুরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় রাজধানীর মিরপুরে বিহারিদের উচ্ছেদ কার্যক্রমের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা থাকার পরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়।
একইসঙ্গে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কারণে ওই সময় বিহারিদের প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের আর্জিও জানানো হয়েছে আবেদনে।
সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় উর্দুভাষী যুব-ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, সহ-সভাপতি মো. জীবন ও নাদের ইসলাম আন্নু এই পিটিশন দায়ের করেন।
আদালত অবমাননার অভিযোগে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ছাড়াও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএনসিসির পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নু এবং পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিবাদী করা হয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনেছেন বিহারিরা।
আপিল বিভাগে আদালত অবমাননার বিষয়ে বিহারিদের আইনজীবী সগীর হোসেন লিয়ন বলেন, এর আগেও ডিএনসিসি মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পগুলো উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছিল। আমরা ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর ক্যাম্প উচ্ছেদ না করতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতে আবেদন করেছিলাম। তখন আগামী ২ মে পর্যন্ত উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
কিন্তু আদালতের সেই আদেশ না মেনে গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পগুলোতে ভাঙচুর চালিয়েছে ডিএনসিসি। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার পিটিশন দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী।
ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযানের পর গত ২৩ জানুয়ারি মিরপুরে বিহারিদের ক্যাম্পে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বিহারিদের বিভিন্ন সংগঠন।
বিহারিদের তিনটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অভিযোগ করে বলা হয়, আপিল বিভাগের আদেশ অমান্য করে মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পে ডিএনসিসি উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিবাদে মিরপুরে মানববন্ধন করে উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট, ওয়েলফেয়ার মিশন অব বিহারিজ ও এসপিজিআরসি
মানববন্ধনে ওয়েলফেয়ার মিশন অব বিহারিজের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পগুলোকে অবৈধ বলে ভেঙে দেয়া হচ্ছে। ক্যাম্প উচ্ছেদ না করতে ডিএনসিসি, ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী ২ মে পর্যন্ত অপেক্ষার আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তারা আপিল বিভাগের আদেশ মানতেও রাজি না। ম্যাজিস্ট্রেট আদেশের কপি দেখতে চাননি। আমরা আদালতের আদেশের মর্যাদা রক্ষার চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘যেখানেই ক্যাম্প উচ্ছেদ হবে সেখানেই প্রতিরোধ হবে। ডিএনসিসি আদালত অবমাননা করবে আর আমরা চুপচাপ মেনে নেব তা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল যখন উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় তখন আমরা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতের আদেশ দেখাতে চেয়েছিলাম। তিনি আদেশের কপি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। একবার দেখার প্রয়োজনও মনে করেননি।’ ডিএনসিসি আদালত অবমাননা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করবো।’
উচ্ছেদ অভিযান চালালেও বিহারিরা দখল ছাড়বে না উল্লেখ করে উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ আলি বাবলু বলেন, ‘যেহেতু ডিএনসিসি আদালতের আদেশ না মেনে আমাদের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাই আমরা এ দখল ছাড়বো না। এখন পর্যন্ত আমাদের ক্যাম্পের প্রায় ৩০০ বাড়ি ও সাড়ে ৪০০ দোকান ভেঙে ফেলেছে ডিএনসিসি।
’মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ওয়েলফেয়ার মিশন অব বিহারিজের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনোয়ার, উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্টের সাধারণ সম্পাদক শাহিদ আলি বাবলু, এসপিজিআরসি মিরপুরের সভাপতি আলি মোহাম্মদ প্রমুখ।
মিরপুর নিউ সোসাইটি ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমরান খান জানান, এখানে উচ্ছেদ অভিযান চলছে রাস্তা বড় করার জন্য। কিন্তু, রাস্তার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার তার চেয়ে বেশি ভাঙচুর চালাচ্ছে ডিএনসিসি।