মেয়াদোত্তীর্ণ সিন্ডিকেট দিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম, জবি |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্যদের নিয়ে। সিন্ডিকেটে থাকা বেশিরভাগ সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এর পরও তাদের মতামতের ভিত্তিতেই গৃহীত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। মেয়াদোত্তীর্ণদের পরিবর্তে নতুনদের সিন্ডিকেটে সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫-এর ধারা ১৭ (১) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ১৫ সদস্যের। পদাধিকারবলে সিন্ডিকেট সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উপাচার্য। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষও পদাধিকারবলে সিন্ডিকেট সদস্য। এ ছাড়া কমপক্ষে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা এবং শিক্ষা ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে দুজন প্রতিনিধি সরকার মনোনয়ন দেয়। একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন দেয়  ইউজিসি। দুজন শিক্ষাবিদকে মনোনীত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। সেইসঙ্গে সিন্ডিকেট মনোনীত তিনজন ডিন এবং একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক সিন্ডিকেট সদস্য হন। আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেট সদস্যদের মেয়াদ যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর। সেই হিসাবে বর্তমান সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে কয়েকজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর। এমনকি দুই বা চার বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্যও সিন্ডিকেটে আছেন। তবে আইন অনুযায়ী একই ক্যাটাগরিতে পরবর্তী মনোনয়ন না হওয়া পর্যন্ত আগের  সদস্য দায়িত্ব পালন করতে পারেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। পদাধিকারবলে তিনি সিন্ডিকেট সদস্য হয়েছেন। ডিসেম্বরে কোষাধ্যক্ষ পদ পাওয়ার পর সিন্ডিকেট সদস্য হন অধ্যাপক ড হুমায়ুন কবির চৌধুরী।

এ ছাড়া ডিন কোটায় সিন্ডিকেট সদস্য হয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হোসনে আরা। তিনি এর আগে একাডেমির কাউন্সিল মনোনীত সদস্য ছিলেন। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে সেখানে নতুন কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় ড. হোসনে আরা একাই দুই কোটায় সিন্ডিকেট সদস্যপদে বহাল আছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। তার মতোই গত সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষ হয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত অন্য দুই সদস্য নূরে আলম আব্দুল্লাহ এবং কাজী সাইফুদ্দীনের। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জবি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, অনেক সিন্ডিকেট সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে আছেন। এর পরিবর্তন প্রয়োজন। অন্যরা সুযোগ পাক।’ এদিকে সরকার মনোনীত দুই সদস্যের মধ্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর। তাদের জায়গায় নতুন মনোনয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।।

একইভাবে চ্যান্সেলর মনোনীত দুই পদের একটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে। ২০১৮ সালে ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হন। দীর্ঘদিন এই দায়িত্ব পালন করছেন না তিনি। আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. হাবীবুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি। বুয়েটের এই শিক্ষক পরবর্তী সময়ে ডুয়েটের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জবির সিন্ডিকেটে চ্যান্সেলর মনোনীত এই দুই শিক্ষাবিদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৪ বছর আগে। তাদের জায়গায়ও নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৭(৪) বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের যে সদস্য যে পদ বা প্রতিষ্ঠান থেকে মনোনীত হয়েছিলেন, তিনি যদি ওই পদ বা প্রতিষ্ঠানে না থাকেন, তাহলে তিনি সিন্ডিকেটের সদস্যপদে অধিষ্ঠিত থাকবেন না। এই নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়াই তার সিন্ডিকেট সদস্যপদ বাতিল হয়। একই অবস্থা বুয়েটের অধ্যাপক ও বর্তমানে ডুয়েটের উপাচার্য ড. হাবীবুর রহমানেরও। বিষয়টি নিয়ে সিন্ডিকেট সভায় একাধিক সদস্য কথা বললেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে।

সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যেসব সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তারাসহ প্রশাসন বিষয়টি জানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়েও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সভাপতি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমি যোগদানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্যদের বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন আছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0085699558258057