টাঙ্গাইলের কাগমারী সরকারি এমএম আলী কলেজের বিএ (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্র ও নাগরপুর উপজেলার নঙ্গিনাবাড়ী গ্রামের আরিফ মিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত চাচাতো ভাই মো. জাহাঙ্গীর মিয়া (৩৩) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত শনিবার বিকালে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরামুল ইসলাম জবানবন্দি রেকর্ড করার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্য তার চাচাতো ভাই কলেজছাত্র আরিফ মিয়াকে (২১) ঘুমের বড়ি খাইয়ে হত্যা করেন তিনি। পরে ছিনতাই করা মোটরসাইকেল হাফিজুর রহমান রনির (৩৩) কাছে বিক্রি করেন। টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহম্মদ স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ব্রিজের নিচ থেকে আরিফের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আরিফ নাগরপুর উপজেলার নঙ্গিনাবাড়ী গ্রামের সৌদি প্রবাসী মো. হোসেন মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরিফের চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাফিজুর রহমান রনি (৩৩) নামে অপর এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর মিয়া নাগরপুর উপজেলার নঙ্গিনাবাড়ী গ্রামের আলহাজ উদ্দিনের ছেলে এবং হাফিজুর রহমান দেলদুয়ার উপজেলার দুল্যা গ্রামের মোকছেদুর রহমানের ছেলে। নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ৮ আগস্ট আরিফ মিয়া নিজের মোটরসাইকেলে চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হন। পরদিন জাহাঙ্গীর বাড়ি ফিরলেও আরিফ ফেরেননি। ৮ আগস্ট রাত ৯টার পরে আরিফ মিয়া তার বোনকে ফোন করে জানান- তিনি সকালে বাড়ি আসবেন। পরের দিন ৯ আগস্ট সকালে আরিফ বাড়িতে ফিরে না আসায় ও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তার মা, বোন ও ভাইয়েরা আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাননি। এ ঘটনায় ১০ আগস্ট আরিফের চাচা হাসান মিয়া নাগরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ১৯ আগস্ট মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে আরিফের লাশ উদ্ধার হয়।
পরে তার বাবা মো. হোসেন মিয়া বাদী হয়ে নাগরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পুলিশ গত শুক্রবার জাহাঙ্গীর মিয়াকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, আরিফের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের জন্যই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮ আগস্ট আরিফকে সঙ্গে নিয়ে টাঙ্গাইলে যান। পরে সেখান থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে জুসের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে আরিফকে কৌশলে পান করান। এতে আরিফের মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ বস্তাবন্দি করে তিল্লি ব্রিজের নিচে ফেলে দেন। মোটরসাইকেলটি তিনি হাফিজুরের কাছে পরদিন বিক্রি করেন। পুলিশ আরও জানান, জাহাঙ্গীর আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে গত শনিবার বিকালে তাকে টাঙ্গাইল আদালতে নেওয়া হয়। এদিকে, অপর গ্রেফতারকৃত আসামি মো. হাফিজুর রহমান রনির দেখানো মতে কালিহাতী উপজেলার বল্লা ইউনিয়নের বেহালাবাড়ী বাজারের বাবুর মনোহারি দোকানের সামনে থেকে কালো-লাল রঙের রেজিস্ট্রেশন বিহীন ১৫০ সিসি পালসার ডবল ডিক্স মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।