মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা ভারতের জন্য বিপজ্জনক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আদালত জরিমানা করলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই চলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শুক্রবার সকালে তিনি এক টুইটে জুড়ে দিয়েছেন, জামিন না পেয়ে জেলে থাকা তাঁর সরকারের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার এক দীর্ঘ চিঠি, যাতে লেখা হয়েছে,  প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার গুরুত্ব বোঝেন না। কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী দেশের পক্ষে বিপজ্জনক।

দিল্লির তিহার জেল থেকে ওই চিঠি সিসোদিয়া লিখেছেন ‘প্রিয় দেশবাসীর’ উদ্দেশে। তাতে বিস্তারে বলা হয়েছে, কেন দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষিত হওয়া জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি বহুদিন ধরেই চর্চার বিষয়। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে মোদি নিজেই কৈশোরে গৃহত্যাগের কথা জানিয়ে বলেছেন, সময়কালে তিনি শিক্ষা শেষ করতে পারেননি। পরবর্তী সময় তিনি দিল্লি ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান বলে দাবি। সেই দাবির সমর্থনে তাঁর দল ও সরকারের তরফ থেকে যে ডিগ্রি পেশ করা হয়েছিল, তার সত্যতা নিয়ে বহুবার বহু মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ডিগ্রি পাওয়ার সেই তথ্য তিনি নির্বাচনী হলফনামাতেও জমা দিয়েছিলেন। কেজরিওয়াল পুরোনো এক মামলায় দেশের মুখ্য তথ্য কমিশনারের (সিআইসি) কাছে এ-সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে সিআইসি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এবং দিল্লি ও গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়কে তা দাখিলের নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় গুজরাট হাইকোর্টে মামলা করে। গত ৩১ মার্চ গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি বীরেন বৈষ্ণবের একক বেঞ্চ সিআইসির নির্দেশ খারিজ করার পাশাপাশি কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

গুজরাট হাইকোর্টের ওই নির্দেশ সারা দেশে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত প্রশংসাপত্র গোপন রাখা বা প্রকাশ না করার কী এমন কারণ থাকতে পারে, তা নিয়ে। লুকোছাপা যদি নাই থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তা প্রকাশ্যে আনছেন না? তা হলে কি সত্য চাপা দেওয়ার সত্যিই কিছু রয়েছে? সামাজিক মাধ্যমও এ নিয়ে সরব। বিস্ময়ের এটাই, বিজেপি বা সরকারের কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন না। ডিগ্রি প্রকাশের দাবি যে প্রধানমন্ত্রীর চরিত্র হনন-সংক্রান্ত ‘চক্রান্তের’ অঙ্গ, তা-ও জোরের সঙ্গে বলা হচ্ছে না। এ সুযোগে আম আদমি পার্টি বিষয়টিকে দেশব্যাপী রাজনৈতিক চর্চায় পরিণত করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

গুজরাট হাইকোর্টের রায় সত্ত্বেও কেজরিওয়াল কয় দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কত শিক্ষিত, তা জানার অধিকার দেশবাসীর রয়েছে। আদালতে প্রশংসাপত্র দেখাতে তাঁর কেন এত আপত্তি, তা বুঝতে পারছেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেছিলেন। ডিগ্রি দেখতে চাওয়া ব্যক্তির কেন জরিমানা হলো, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, একজন অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী দেশের পক্ষে বিপজ্জনক। 

তিহার জেল থেকে মণীশ সিসোদিয়াও দেশবাসীকে হিন্দিতে লেখা এক খোলাচিঠিতে সেই প্রশ্ন তুলেছেন, যা কেজরিওয়াল আজ শুক্রবার তাঁর টুইটের সঙ্গে জুড়ে দেন। সিসোদিয়া চিঠিতে লিখেছেন, ‘আজকের প্রজন্ম উচ্চাশী। তারা জীবনে বড় হতে চায়। কিছু করে দেখাতে আগ্রহী। সে জন্য তারা সুযোগ পেতে চায়। পৃথিবী জয় করতে চায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভর দিয়ে তারা জীবনে সফল হতে চায়। কোনো অল্পশিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী কি আজকের যুব সমাজের ওই স্বপ্ন সফল করতে পারেন?’

সিসোদিয়ার চিঠি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কেজরিওয়াল টুইটে লিখেছেন, ‘মোদিজি বিজ্ঞান বোঝেন না। মোদিজি শিক্ষার মাহাত্ম্য বোঝেন না। গত কয়েক বছরে ৬০ হাজার শিক্ষালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভারতের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন।’

কেন প্রয়োজন, সেই ব্যাখ্যাও সিসোদিয়া চিঠিতে দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে বলা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার অবাক লাগে, যখন শুনি প্রধানমন্ত্রী বলছেন, নর্দমার গ্যাসে পাইপ ঢুকিয়ে তা দিয়ে আমরা চা তৈরি করতে পারি! রান্না করতে পারি! না ওভাবে রান্না করা যায় না। তিনি যখন বলেন, মেঘের আড়ালে থাকা বিমান র‌্যাডারে ধরা পড়ে না, তখন গোটা পৃথিবীর কাছে তিনি হাসির খোরাক হয়ে যান। স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাও তাঁকে নিয়ে মশকরা করেন।’

সিসোদিয়া লিখেছেন, গোটা পৃথিবী জানে তিনি অল্প শিক্ষিত। বিজ্ঞানের ন্যূনতম জ্ঞানও তাঁর নেই। অন্য রাষ্ট্রনায়কেরা যখন তাঁকে জড়িয়ে ধরেন, তখন তাঁরা প্রতিটি কোলাকুলির দাম আদায় করে নেন।

এই একই কথা কেজরিওয়ালও বলেছিলেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষিত হলে তাঁকে দিয়ে যা খুশি সই করিয়ে নেওয়া যায় না। শিক্ষিত প্রধানমন্ত্রীকে বোকা বানানো কঠিন।

আদানি বিতর্ক নিয়ে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বলেছেন, বিরোধীরা তাঁর সম্মানহানির চেষ্টা করছে। শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিষয়ে তিনি এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031979084014893