মোবাইল ছেড়ে বইয়ে মন

মিথিলা মুক্তা, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

চট্টগ্রামের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।

সময় পেলেই মোবাইল ফোনে বিভিন্ন গেম খেলে বা ইউটিউবে নানা ধরনের ভিডিয়ো দেখেন। কয়েক দিন ধরে দেশ ইন্টারনেটবিহীন থাকায় মোবাইল ফোনের প্রতি তার আগ্রহ কমেছে। গল্পের বই পড়ায় মন দিয়েছেন তিনি। 

গত কয়েক দিনে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের একটি বই পড়া শেষ করে আরেকটি শেষের পথে। নতুন করে আরো গল্পের বই কেনার আবদার করছেন জান্নাতুল। 

এই অবস্থা শুধু জান্নাতুলের নয়, রাজধানী ঢাকা, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অনেক শিশুই মাত্র কয়েক দিনেই মোবাইল ফোন ছেড়ে বই বা খেলাধুলায় মনোযোগ দিয়েছেন। অনেক শিশু যেনো ভিন্ন এক জগতে প্রবেশ করেছেন।

কিছু অভিভাবক বাসার কম্পিউটারে সেভ করে রাখা শিশুতোষ চলচ্চিত্রও দেখাচ্ছেন সন্তানদের। বেশি ছোটসহ কিছু শিশু অবশ্য মোবাইল ফোন না পেয়ে কান্নাকাটি করছেন। স্কুল বন্ধের মধ্যে শিশুদের ঘরে দীর্ঘ সময় কাটানো কষ্টকর হলেও অভিভাবকরা অসহায়। এ শহরে বাইরে খেলাধুলার সুযোগ অতি সীমিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি শিশুকে যেভাবে গড়ে তোলা যায়, সে সেভাবেই গড়ে ওঠে। বছর কয়েক আগেও স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিলো না। তখন শিশুরা ঠিকই বই পড়া, খেলাধুলাসহ নানা রকম বিনোদন বা কাজে ব্যস্ত থাকত। এখন বেশির ভাগ শিশুই মোবাইল ফোনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার এই কয়েকটি দিনের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে একটি বিরাট সুযোগও। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন শিগগিরই ইন্টারনেট ফিরে এলেও যেনো শিশুদের হাতে আর মোবাইল ফোন দেওয়া না হয়। তাহলে তাদের ধীরে ধীরে মোবাইল ফোনের আসক্তি কমবে। এভাবে তাদের মোবাইল ফোন ছাড়া গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে। শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে বড়দেরও মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

রাজধানীর মগবাজারের অভিভাবক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেয়ের  অবস্থা দেখে আমি অবাক হয়েছি। যে মেয়ে আগে সময় পেলেই মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকত সে এখন ফোন ছুঁয়েও দেখছে না। তাকে দেখছি বই পড়তে। খেলাধুলা করতে। বাচ্চাদের জন্য যদি ইন্টারনেটবিহীন জগৎ আমরা করতে পারতাম তাহলে অনেক ভালো হতো।’

গবেষণায় উদ্বেগজনক চিত্র

সাম্প্রতিক সময়ে শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্তি যে কতোটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তা এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গত বছর এক আন্তর্জাতিক জার্নালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নাজমুল হকের নেতৃত্বে তৈরি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে গবেষকদল দেখিয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রাক-স্কুল শিশুই স্মার্টফোনে আসক্ত। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশুর মারাত্মক পর্যায়ের আসক্তি রয়েছে। এমনকি ৮ শতাংশ শিশুর ব্যবহারের জন্য পৃথক স্মার্টফোন আছে। শিশুরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে, যা ইউনিসেফ কর্তৃক সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ সময়ের প্রায় তিন গুণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু গড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করে।

শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্তির কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৫ শতাংশ মা-বাবাই তাঁদের সন্তানদের কম সময় দেন। ৫২ শতাংশ শিশু খেলার মাঠের অভাবে এবং ৪২ শতাংশ শিশু খেলার সঙ্গীর অভাবে স্মার্টফোনে আসক্ত হচ্ছে। ৭৯ শতাংশ প্রি-স্কুল শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করে কার্টুন বা কল্পকাহিনি দেখার জন্য, ৪৯ শতাংশ গেম খেলার জন্য এবং ৪৫ শতাংশ ভিডিও দেখা বা গান শোনার জন্য। মাত্র ১৪ শতাংশ শিশু পড়ালেখার কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। ৭৩ শতাংশ মা বাচ্চার জ্বালাতন ছাড়া কাজ করতে, ৭০ শতাংশ মা বাচ্চাদের পছন্দের কারণে তাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেন। এ ছাড়া ৬৭ শতাংশ মা সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য এবং ৩১ শতাংশ মা তাদের ঘুম পাড়ানোর জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেহতাব খানম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘শিশুরা মূলত বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছে। যখন আবার ইন্টারনেট চালু করে দেবে, তখন আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। এখন শিশুদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। মা-বাবার মোবাইল ফোনে আসক্তি আরো বেশি। ইন্টারনেট কী করে ব্যবহার করতে হয় সে ব্যাপারে গাইডলাইন আমাদের দেশে নেই। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন সেখান থেকে বের হতে হলে অনেক বড় পদক্ষেপ নিতে হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030970573425293