২০২০ খ্রিষ্টাব্দের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক ৪ ভাগ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সাক্ষরতার হার ছিল ১৬.৮ শতাংশ। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে ৩৫ দশমিক ৩। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ পরে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নকালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত সময়ের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। রোববার (২২ নভেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, তখন দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এতে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে এবং আমরা ক'বছরের মধ্যেই শতভাগ শিক্ষার হার অর্জন করতে সক্ষম হবো। কিন্তু এখন সরকারকে শুধু শিক্ষার হার বাড়ানোর দিকেই নজর দিলেই চলছে না; টেকসই উন্নয়নের জন্য উচ্চশিক্ষার দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে। ফলে মানসম্মত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং যেগুলো রয়েছে সেগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। অনেকেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পর শিক্ষার হারের দিকে তাকিয়ে কিছুটা হতাশ হন ও ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করতে থাকেন। কিন্তু তাদের মনে রাখা বাঞ্ছনীয়; বাংলাদেশে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যতজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে বসে, উন্নত দেশে সেই পরিমাণ জনসংখ্যাই নেই। অন্যান্য প্রতিকূলতার কথা বাদই দিলাম।
উচ্চশিক্ষা প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একটি করে সাধারণ অথবা বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা-পরবর্তীতে বাঙালি জাতিকে আধুনিক শিক্ষার মনন ও মেধায় গড়ে তুলতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে পথে হেঁটেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাও সেই পথেই হাঁটছেন। বিশাল এক জনগোষ্ঠী যাতে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়েও তার সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এই বিষয়টি খুবই ভালো লাগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের যে কোনো অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীকে সুশিক্ষা অর্জন এবং শিক্ষার প্রসারে কাজ করতে নির্দেশ দেন। তিনি প্রায় সময় বলেন, তোমাদের এলাকায় ঘুরে ঘুরে দেখবে যে মানুষটা নিজের নাম নিজে লিখতে পারে না, তাকে অন্তত নাম লেখাটা শেখাবে। আমি ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাক্ষরতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছি, তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে রয়েছে তাদের বলব, কাজটা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এতে সবারই উপকার হবে।
আমার বাড়ি ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার জেলায়। মৌলভীবাজার জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ এখন সময়ের দাবি। ২৫ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে মৌলভীবাজার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জেলা। দেশের কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতিতে জেলার রয়েছে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন চা বাগান ও মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আদিবাসীদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত সুবিধাসহ প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্য সমাহারে এ জেলাটি ভিন্নতার দাবি রাখে। এ ভিন্নতা ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মনু ব্যারাজ, মাধবপুর চা বাগান লেক, মণিপুরি পল্লি, প্রাকৃতিক গ্যাস ট্রান্সমিশন প্লান্ট, কমলালেবু-আনারসের বাগান। এ ছাড়া পাহাড়-টিলা, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, হাওর-বাঁওড়-ঝিল, ঝরনা, নদনদী পরিবেষ্টিত। সবকিছু বিবেচনায় জাতীয় অর্থনীতিতে এ জেলার গুরুত্ব কম নয়।
এত কিছু থাকার পরও মৌলভীবাজার জেলাটি এখনও অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। এই অঞ্চলের ২৫-৩০ লাখ মানুষের এখন একটি জোরালো দাবি- জেলায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হোক। মৌলভীবাজার জেলার অনেক ছেলেমেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঝরে পড়ে। এর মূল কারণ হলো নিজ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার কারণে অনেক অভিভাবক সন্তানদের দূরে রেখে লেখাপড়া করাতে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম নন। বিশেষ করে তারা মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পড়ালেখা বন্ধ করতে বাধ্য হন। নিশ্চিত করেই বলা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে ঝরে পড়ার হার অনেকটাই কমে যাবে এবং তাতে একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার হার বাড়বে, তেমনি অঞ্চলভিত্তিক টেকসই উন্নয়নও সম্ভব হবে।
সবুজে ঘেরা ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার জেলায় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে এই অঞ্চলের উচ্চশিক্ষা অর্জনপিপাসু মানুষের জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটানো সময়ের দাবি।
লেখক : এসএম জাকির হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ