যত্রতত্র ময়লা দুর্গন্ধে ঢাবির হলে টেকা দায়

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। কোনো কোনো স্থান রীতিমতো ভাগাড়। একাডেমিক ভবন এবং হলগুলোর শৌচাগার খুবই নোংরা, দুর্গন্ধে টেকা দায়। ৩৫০ পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বহর থাকলেও নেই শৃঙ্খলা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বাড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দপ্তর প্রশাসন-৯-এর তথ্যমতে, স্থায়ী ও খণ্ডকালীন ৩৫০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী সবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৮ ঘণ্টা কাজের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদের পরিচালনায় আছেন কেয়ারটেকার-সুপারভাইজার ও অফিসপ্রধান। তবে সরেজমিন তাদের বেশির ভাগেরই দায়িত্ব পালনে দায়সারা ভাব দেখা গেছে। সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় কোনো হলে দিনে দু’বার; আবার কোথাও সপ্তাহে দু’বার পরিষ্কার করা হয়। আবার কর্মীদের রেষারেষিতে দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় অনেক স্থানে জমে গেছে ময়লার স্তূপ। কেউই পরেন না পরিচ্ছন্নতা কর্মীর নির্ধারিত পোশাক।

 

গত বছর নভেম্বরে সব দপ্তরে চিঠি দিয়ে প্রশাসন জানায়, পরিচ্ছন্নতার কাজে শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। কর্মীদের অনেকেই সঠিক সময়ে অফিস করছেন না। ধুলোবালির কারণে রাস্তায় চলতে অসুবিধা হচ্ছে। চিঠিতে পরিবেশের উন্নয় ঘটাতে কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে তার কিছুই মানা হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন, টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, মসজিদ, মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবন, চারুকলা, কলাভবন, এফবিএস, বিভিন্ন হল ও হলের আশপাশ বেশ অপরিচ্ছন্ন দেখা যায়। শৌচাগারগুলো অস্বাস্থ্যকর। নাক চেপে ধরে ঢুকতে হয়। অবশ্য কার্জন হল, ছাত্রীদের হল, একাডেমিক ভবন ও আইবিএর চিত্র তুলনামূলক ভালো।

শামসুন নাহার হলের অনার্স ও মাস্টার্স ভবনের শৌচারগার মান্ধাতা আমলের। মোজাইকের মেঝেতে শ্যাওলা জমে ঘন-কালো হয়ে গেছে। একই হাল স্যার এফ রহমান, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ও কেন্দ্রীয় মসজিদের শৌচাগারের। বিজয় একাত্তর, মাস্টারদা সূর্য সেন, কলাভবন, লেকচার থিয়েটার ভবন, রেজিস্ট্রার ভবন, টিএসসি, কাজী মোতাহের হোসেন ভবন, মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবনের ওয়াশরুম টাইলস করা হলেও অপরিষ্কার। বেশির ভাগ ভবনের শৌচাগারে নেই সাবান। তবে কলাভবনের সুপারভাইজার মকবুল হোসেনের ভাষ্য, তাদের কর্মীরা দিনে দু’বার ওয়াশরুম পরিষ্কার করেন। নোংরা থাকার কথা নয়।

রেজিস্ট্রার ভবনের প্রকৌশল দপ্তরের সামনের মাঠ যেন ময়লার ভাগাড়। গত মঙ্গলবার জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়োগ শাখা এস্টেট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহেদ মিয়া অপরিচ্ছন্নতার কথা স্বীকার করেন। তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে শুক্রবার পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের নিজস্ব পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। যদিও কে কোনো অংশ পরিষ্কার করবে, তা নিয়ে নির্দেশনা নেই। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের শৌচাগারগুলো কিছুটা পরিষ্কার থাকলেও মানা হয় না স্বাস্থ্যবিধি। শাহবাগ থেকে টিএসসি সড়কসংলগ্ন নাটমণ্ডলের পুরো বাগানে ময়লা-আবর্জনা। চারুকলার ভেতরও বেশ অপরিচ্ছন্ন। টিএসসির শৌচাগারগুলো বেহাল। টিএসসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, বিষয়গুলো তিনি দেখবেন।

গণিত ভবন তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন। শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা না থাকলেও শৌচাগার তথৈবচ। ছাত্রছাত্রী সব হলে একই সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তবে কয়েকটি হলে প্রভোস্টদের অবহেলায় অপরিচ্ছন্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে– সলিমুল্লাহ মুসলিম, বিজয় একাত্তর, হাজী মুহম্মদ মুহসীন ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। তবে বেশ কয়েকটি হল সমানসংখ্যক জনবল নিয়ে প্রভোস্টদের আন্তরিকতায় ঝকঝকে পাওয়া গেছে।

বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল বাছির জানিয়েছেন, তিনি নিজে ঘুরে দেখে ব্যবস্থা নেবেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ইকবাল মামুন রউফ বলেছেন, ‘আমাদের হল বড়, লোক কম। এ জন্য চাইলেও পারা যায় না।’ মাস্টারদা সূর্য সেন হলের তত্ত্বাবধায়ক মঈনুল ইসলামও জনবল ঘাটতির অজুহাত দেন এবং ইউজিসিতে এ জন্য চিঠি দিয়েছেন বলেন। 

হাজী মুহসীন হল মাঠের চারপাশে ময়লার স্তূপ। রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত ভ্যান। ওয়াশরুম অনেক পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল বেশ পরিচ্ছন্ন। কবি জসীম উদ্‌দীন হলের দোকানগুলোর সামনে ও ক্যান্টিনের পাশে ময়লা দেখা যায়। জসীম উদ্‌দীন হলের ওয়াশরুম দিনে দু’বার পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ফজলুল হক মুসলিম, অমর একুশে, কবি সুফিয়া কামাল, রোকেয়া হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, কুয়েত মৈত্রী হল পরিচ্ছন্ন; শৌচাগারও মোটামুটি পরিষ্কার দেখা গেছে।

উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস ও হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন। কারও গাফিলতি সহ্য করা হবে না। আরও কী করলে বিষয়টি শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030748844146729