দেশের প্রথম ডিজিটাল শিক্ষাবোর্ড যশোরে চলছে এনালগ কারবার। নামে ডিজিটাল হলেও কাজকর্মের অবস্থা এনালগ সময়ের চেয়ে খারাপ। বর্তমানে যশোর শিক্ষাবোর্ডে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। নাম সংশোধন করতে মাসের পর মাস ঘুরেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। নাম সংশোধনের আনুমানিক ১৬ হাজার আবেদন ঝুলে আছে এখানে। এক সচিবের আইডিতে পড়ে আছে ১৩০০ আবেদন! এসব আবেদন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে সময় লাগবে ৫ থেকে ৭ বছর। সেই পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হবে আবেদনকারীদের।
যশোর শিক্ষাবোর্ডকে দেশের সর্বপ্রথম ডিজিটাল বোর্ড করতে বিভিন্ন খাতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করা হয়েছে। সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খানের বাড়ি যশোরে হওয়ায় তার সহযোগিতায় এই বোর্ডকে প্রথম ডিজিটাল করার কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি যত দিন শিক্ষাসচিব ছিলেন তত দিন ডিজিটাল কার্যক্রমে কিছুটা হলেও গতি ছিল। তখন অনলাইনে সব আবেদন জমা ও নিষ্পত্তি করা হতো বলে সূত্র জানিয়েছে।
মোল্লা আমীর হোসেন চেয়ারম্যান হিসেবে যশোর বোর্ডে যোগদানের কয়েক দিনের মধ্যে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। ওই মতবিনিময়ে তিনি বলেছিলেন, যশোর বোর্ডের সব কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। একটি আবেদনও কোনো কর্মকর্তা চাইলেও তিন দিনের বেশি আটকে রাখতে পারবেন না। সফটওয়্যার সেভাবে তৈরি করা হয়েছে। তিন দিন পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদন পরের কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। এভাবে নিষ্পত্তি হবে। যদি তাই হয় তাহলে নাম সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি হলো না কেন। কেন মাসের পর মাস পড়ে থাকল। এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই কারো কাছে। কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মামলা কাঁধে নিয়ে মোল্লা আমীরের বিদায়ের পর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব। তার সাথে সচিব হিসেবে যোগ দেন আব্দুল খালেক সরকার। বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার দাবি, এই সময়ে বোর্ডের ডিজিটাল কার্যক্রম থমকে দাঁড়ায়। বিশেষ করে সচিব তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেননি। বিষয়টি চেপে যান চেয়ারম্যান আহসান হাবীবও। ফলে সেবা পাওয়ার পরিবর্তে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ জরুরি প্রয়োজনে নাম সংশোধনের আবেদন করে মাসের পর মাস ঘুরে বেড়ালেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ কারণে অনেকের জরুরি কাজ আটকে রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে নাম সংশোধনের আনুমানিক ১৬ হাজার আবেদন আটকে আছে।
এক সচিবের আইডিতে মাসের পর মাস পড়ে আছে এক হাজার ৩০০ আবেদন। বিপুলসংখ্যক আবেদন কবে নিষ্পত্তি হবে সেই সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারছেন না। কারণ সচিব পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে সদ্য যোগদানকারী বিশ্বাস শাহিন আহমেদ। তার পক্ষে জমে থাকা নাম সংশোধনের আবেদনের স্তূপ সরানো অসম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি ডিজিটাল বোর্ডের এই এনালগ কারবার নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার অভাবে এমন অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের কারণে সম্মানহানি হচ্ছে যশোর বোর্ডের। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর আহসান হাবীব বলেন, ‘কাজের প্রেশার বেশি। এ কারণে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। নাম সংশোধনের ২০০ আবেদন নিষ্পত্তি হলে ৩০০ আবেদন জমা পড়ছে। ফলে, ধীরে ধীরে কাজ এগোচ্ছে।’