যুদ্ধাপরাধীর নামে কলেজ : কার্যক্রম বন্ধ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা-নির্যাতন চালানো কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর নামে পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কলেজ কার্যক্রম বন্ধ করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধাপরাধীর নাম পরিবর্তনের জন্য পাঁচ বছর ধরে তাগাদা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু সাড়া না পেয়ে গত বুধবার কলেজ শাখার সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জাহেদুল হক। তবে কলেজ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করলেও স্কুল পর্যায়ে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার রহিমপুরে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করে তার পরিবার। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সেটি কলেজে উন্নীত করে নাম হয় ‘ফজলুল কাদের চৌধুরী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। স্কুল শাখায় নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি এবং কলেজ শাখায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠদান চলে প্রতিষ্ঠানটিতে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক বলেন, রাজাকার-আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের নামে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলো থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠানটিকে গত পাঁচ বছর ধরে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে নাম পরিবর্তনের অনুরোধ করেছি। এমনকি এলাকার নামে নামকরণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠাতাদের পক্ষ থেকে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়। প্রথমে তারা নাম পরিবর্তনে অস্বীকৃতি জানান। এর পর ফজলুল কাদেরের নাম কৌশলে রাখার চেষ্টা করেন। আবার তার বিতর্কিত সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নাম দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমরা বারবার আপত্তি জানালেও তারা সাড়া দেননি। এভাবে পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর আমরা ওই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি, পাঠদান, পরীক্ষার নিবন্ধনসহ সব কার্যক্রম বাতিল করেছি। তারা নাম পরিবর্তনের গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত জানালে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ পরিবর্তনের নির্দেশনা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও সাংবাদিক, গবেষক শাহরিয়ার কবীর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও সড়ক থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম পরিবর্তন করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের নির্দেশনা দেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক বিপ্লব গাঙ্গুলি বলেন, স্কুল শাখাকেও নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা না মানায় স্বীকৃতি আপনাআপনি বাতিলের বিধান আছে। আমরা এখন সেই পথে যাব।

ফকা চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহীরা গ্রামে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করেছিলেন তৎকালীন এই মুসলিম লীগ নেতা। চট্টগ্রাম শহরে তার বাড়ি ‘গুডস হিলকে’ টর্চার ক্যাম্প বানিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা, যাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ফকাপুত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ রাজাকার-আলবদররা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ওই টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো।

পাকিস্তানের পরাজয়ের পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর নৌযানে করে দেশ থেকে পালানোর পথে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন ফজলুল কাদের। বন্দি অবস্থায় ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

ফকা চৌধুরীর ছেলে যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হয় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ নভেম্বর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054309368133545