যে কারণে সায়েন্সল্যাব এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় শিরিন ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর এটি আইইডি বা কেমিক্যাল বিস্ফোরকের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা কি না, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলও। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, জমে থাকা গ্যাস থেকে ওই বিস্ফোরণ হয়। ভবনের অবকাঠামো দুর্বল থাকায় তা ভেঙে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যুয়ারেজ লাইন থেকে বা তিতাসের লাইন অথবা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস জমে থাকতে পারে। তাতে আগুনের স্পর্শ পেয়ে বিস্ফোরণে রূপ নেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারা ডিটেক্টর দিয়ে আলামত পরীক্ষা করেছেন। এতে কেমিক্যাল বিস্ফোরকের উপস্থিতি মেলেনি। সেখানে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মিথেন গ্যাস বাতাসে মিশে বিস্ফোরকে রূপ নিতে পারে।

জমে থাকা গ্যাস থেকে মিথেনের সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে এই বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ জানান, একটি ভবনে বিভিন্ন কারণে গ্যাস জমতে পারে। অরক্ষিত পাইপলাইন বা স্যুয়ারেজ লাইন থেকেও এটা জমতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, স্যুয়ারেজে জমে থাকা গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

সিটিটিসির বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধসে পড়া ভবনের তৃতীয় তলায় ছাদের অংশে বিস্ফোরণ বড় হয়েছে। ওই তলায় ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিউমার্কেট শাখা রয়েছে। অফিসটিতে জমে থাকা স্যুয়ারেজ লাইনের গ্যাসের কারণে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিশেষজ্ঞ দলটি জানায়, ভবনটিতে বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি।

বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান কমান্ডিং অফিসার মেজর মো. কায়সার বারী বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্র দিয়ে ঘটনাস্থলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর আমরা মনে করছি, এ বিস্ফোরণ বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি। যদি বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করা হতো তাহলে আমাদের যন্ত্রের মাধ্যমে সেটা বুঝতে পারতাম।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে। প্রকৃত কারণ জানার জন্য আমাদের আরও তদন্ত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা বলতে পারি এখানে বিস্ফোরক দ্রব্যের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এখানে বারুদ বা আইইডি ব্যবহারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের নিউমার্কেট জোনের প্রধান উপসহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে বলেন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস বের হতে না পারায় ভবনটির ভেতর রীতিমতো গ্যাস চেম্বার হয়ে গিয়েছিল। এটি লাইনের গ্যাস, সিলিন্ডার গ্যাস বা স্যুয়ারেজ লাইনের গ্যাস জমে হতে পারে। সেখানে আগুনের স্পর্শ পেয়ে বিস্ফোরণে রূপ নেয়। ভবনটি দুর্বল কাঠামোতে তৈরি হওয়ায় বিস্ফোরণের ভয়াবহতা বেশি হয়েছে। তা ছাড়া ভবনটি আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

তিতাস গ্যাসের উপমহাব্যবস্থাপক (ইমার্জেন্সি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাদের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভবনটির ওপরে তিতাসের লাইন নেই। নিচে লাইন থাকলেও যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেটি লিকেজ নয়। তৃতীয় তলার একটি অফিসে ইলেকট্রিক কেতলি পাওয়া গেছে। সেটি থেকে আগুন ধরার পর হয়তো বিস্ফোরণ হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ২৫ মিনিটের মধ্যেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।

ওই ভবনের তৃতীয় তলায় নিউ জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি অফিস রয়েছে। কয়েক দশক ধরে তারা সেখানে অফিস চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আকরামে হোসেনের তথ্যেও উঠে আসে ভবনটি দুর্বল অবকাঠামোতে তৈরি এবং এটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, ‘আগেও বেশ কয়েকবার ভবনের মালিককে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন এর খেসারত দিতে হলো ভাড়াটেদের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028800964355469