যে ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

তদবিরে যত্রতত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো ফার্মেসি বিভাগ খোলার। কয়েক বছরের ব্যবধানে তা গলার কাাঁটা হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে ফার্মাসি শিক্ষায় মান ধরে রাখতে পারছে না দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তাদেরকে সময় বেঁধে দিয়ে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষক সংকট কাটানো, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, পর্যাপ্ত কেমিক্যালের ব্যবস্থা রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরিসহ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। এ সময়সীমার পর ফার্মাসি বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে এসে চলতি মাসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাউন্সিল।

সারাদেশে ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল। সংস্থাটির অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এ বছর ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে ল্যাব সংকট, ল্যাবের যন্ত্রপাতি অকেজো, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা কারণে সরকারি-বেসরকারি ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের বি.ফার্ম কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন স্থগিত করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ ও নির্দেশনা দিয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বি.ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

নির্দেশ অমান্য করে যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বি.ফার্ম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাহলে ওই সব শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন দেবে না কাউন্সিল। এমনকি এসব শিক্ষার্থী পাস করার পর ‘পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না’ উল্লেখ করে কঠোর ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী ৩১ অক্টোবর ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ ব্যস্তবায়নের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে– কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে– আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং  ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে যুগোপযোগী নীতিমালা

ফার্মাসি শিক্ষার মান উন্নয়নে যুগোপযোগী করা হয়েছে নীতিমালা। এতে ফার্মাসি বিভাগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল, রিয়েজেন্ট ও জনবলসহ আটটি ল্যাব স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য হাতেকলমে গবেষণায় সুযোগ তৈরি এবং রিসার্চ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষাগারে কমপক্ষে ২৫ শিক্ষার্থী একত্রে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার উপযোগী ন্যূনতম ৫০০ বর্গফুট আয়তন থাকতে হবে। পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আলাদা কক্ষ থাকতে হবে। বাকি ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ আগস্টের মধ্যে পরিদর্শন শেষে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।

এর আগে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দু’জন। বিষয়টি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও ল্যাব সহায়ক নিয়োগসহ চার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ না থাকায় ফ্লোরে বসে তাদের ক্লাস করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর আগে অনেকবার জানালেও শুধু আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

ফার্মাসি বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অর্ঘ্য প্রসূন সরকার জানান, বিভাগে পাঁচজন শিক্ষক ও দু’জন ল্যাব কর্মকর্তা প্রয়োজন। বর্তমানে মাত্র দু’জন শিক্ষক দিয়ে চারটি ব্যাচের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। রাতারাতি তো আর সম্ভব নয়। আগামী মাসের ২-৩ তারিখের দিকে শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা করছি। রাতারাতি চারটা ৫টা ল্যাব করা যাবে না। আমাদের সাধ্যের ভেতরে যতটুকু করার ততটুকু করব।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খান বলেন,  তারা কিছু শর্ত দিয়েছিল। রুম বড় বড় লাগবে, কিছু ইকুইপমেন্ট থাকতে হবে। এসব সঠিকভাবে না হওয়ায় তারা ভর্তি আপাতত স্থগিত করেছে।
রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ফার্মাসি কাউন্সিলের অনুমোদন আছে। তারা কিছু শর্ত দিয়েছিল, শর্ত পূরণ করে কাউন্সিলকে জানাতে বলেছে। তা আমরা জানাব।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন বডি হিসেবে ফার্মাসি কাউন্সিলের পূরণীয় শর্ত প্রতিপালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাধ্য।  পর্যাপ্ত ল্যাব, শিক্ষক, বই ছাড়া কখনও প্রকৃত জ্ঞানার্জন সম্ভব হবে না। ডিগ্রি প্রাপ্তির চেয়েও জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জন জরুরি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘ঢাবির ভেতর দিয়ে সচিবদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ভেতর দিয়ে সচিবদের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে’ পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন রূপ নিলো মারামারিতে - dainik shiksha পেনশন প্রত্যাহারের আন্দোলন রূপ নিলো মারামারিতে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত কোটা ইস্যুতে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাবি - dainik shiksha কোটা ইস্যুতে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে ঢাবি স্কুলে পানি, কাল মূল্যায়ন, চিন্তিত শিক্ষকেরা - dainik shiksha স্কুলে পানি, কাল মূল্যায়ন, চিন্তিত শিক্ষকেরা নতুন কারিকুলাম: গিয়ান, ওরজন ও এগুলে প্রসঙ্গ - dainik shiksha নতুন কারিকুলাম: গিয়ান, ওরজন ও এগুলে প্রসঙ্গ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022480487823486