দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নকল সনদের কাগজ সংগ্রহ করা হতো রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে। ডিজাইন করা হতো খিলগাঁওয়ের একটি ভাড়া বাসায়। আর সনদ তৈরি হতো পল্টনের একটি ছাপাখানায়। সরকারি প্রেসে সনদ ছাপার নিয়ম থাকলেও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের জাল স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র ও কার্যাদেশ দেখিয়ে পল্টনের ছাপাখানাটিতে তৈরি করা হয়েছে হাজার হাজার সনদ। এ ঘটনায় জড়িত একজন ডিজাইনারকে গ্রেফতারের পর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতির আর ও চমকপদ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায় পল্টনের একটি বেসরকারি ছাপাখানায় দেদারসে চলছে সনদ ছাপার কাজ, তবে তা জাল সনদ। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট রীতিমত খুলে বসেছে বোর্ড। আর এর হোতা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রধান সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টিএম শামসুজ্জামান।
চক্রটি সনদ তৈরির পেপার কোথায় পেল, সেই তদন্তে নেমে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে কামরুল হাসান আবেদ নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মার্কসিট ও সনদের ফাঁকা কাগজ। কামরুল মূলত পল্টনে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। অসাধু চক্রটির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ফকিরাপুল এলাকা থেকে কাগজ কিনে পল্টনের একটি ছাপাখানায় জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ফাঁকা পেপার তৈরি করতেন তিনি।
গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে উদ্ধার করা নকল নম্বরপত্র ও সনদের কপির সঙ্গে আসল সনদের কাগজ মিলিয়ে দেখেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পেপার কাটিং থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ছাপ সবই বোর্ডের আসল পেপারের মত দেখতে।
কামরুল হাসান আবেদ বলেন, আমার কাছে যারা এসেছিলেন তাদের আইডি কার্ড ছিল। যার কারণে আমি তাদের কথায় সায় দেই। তারপরও বলেছি আমাকে অথর্রিটি দিতে হবে। তারা বলল, তাদের ৫০০ পিস দিতে হবে। মূলত ৫০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজন। প্রত্যেক শিক্ষার্থী নাকি দুইটা করে পান সার্টিফিকেট।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে এসব জাল সনদ তৈরিতে রাজি না হওয়ায় কামরুলকে দেখানো হয়েছিলো, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ কেপায়েতুল্লাহর স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র ও কার্যাদেশ। আর সেই কার্যাদেশটিও ছিল নকল। যদিও পরে টাকার লোভে কামরুল সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় বসে সার্টিফিকেট তৈরি করা হতো। সেই সফটকপি নিয়ে ফকিরাপুল থেকে বিশেষ ধরনের কাগজ কিনে পুরানাপল্টনে একটি অত্যাধুনিক ছাপা মেশিনে সেটি ছাপানো হতো।
পুলিশ বলছে, বিজি প্রেস বা সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে এসব সনদ তৈরির কথা থাকলেও চক্রটি বেছে নিয়েছিলো রাজধানীর পল্টনের একটি বেসরকারি ছাপাখানা। এর সঙ্গে যাদের নাম আসবে তাদের সবাইকে নিয়ে আসা হবে আইনের আওতায়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা তদন্ত করছি। অন্যায়ভাবে কেউ শাস্তি যেন না পায়, সেটা আমরা দেখছি। তবে কেউ অন্যায় করলে পার পাবে না। সে যত বড় রাঘববোয়াল হোক না কেন?
শুধু কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নয়, গোয়েন্দারা বলছেন অন্যান্য সাধারণ বোর্ডের সনদও জালিয়াতি হচ্ছে।