দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : আজকাল ইলেকট্রনিক স্ক্রিনের দিকে ক্রমাগত একনাগাড়ে দীর্ঘসময় ধরে তাকিয়ে থাকার কারণে লোকের দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত সমস্যা যেন বেড়েই চলেছে। কম্পিউটার, টিভি এবং স্মার্টফোন এখনকার দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত সমস্যার প্রধান কারণ। চশমার মাধ্যমে এর সমাধান করা গেলেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-যাপনের মাধ্যমেও এর সমাধান করা যেতে পারে।
মেডিকেল সায়েন্সের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুসারে, বতর্মানে প্রায় অনেকেই দৃষ্টিহীনতাসহ দুর্বল দৃষ্টিশক্তির সমস্যায় ভুগছেন। দিন দিন তা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুষ্টিহীনতাকে এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । তবে কর্মব্যস্ততা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনসহ আরও নানা কারণে ২৫-৪০ বছর বয়সিদের শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন শরীরের কার্য ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যাচ্ছে। এখানে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেয়া হল যেগুলো চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
গাজর : গাঁজর খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। এতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। এ ছাড়া দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার প্রধান দুটি কারণ অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে গাঁজর।
সবুজ শাক-সবজি : বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই শাক-সবজি খেতে তেমন একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু শাক না খেলে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটা সম্ভব নয় । আর চোখে যদি আলো না থাকে, তাহলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় অন্ধত্বও দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে অনেকেই প্রথমে চশমা ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু চশমা ব্যবহার করাটাই মূল সমাধান নয়।কেননা বয়স যত বাড়তে থাকবে চোখের দৃষ্টি শক্তি তত কমতে থাকবে। তাই তো প্রতিদিন নিয়ম করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। কারণ এই ধরনের শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং জিয়াক্সেনথিন নামে বেশ কিছু উপকারি উপাদান থাকে। এ উপাদানগুলো ছানি ছাড়াও একাধিক চোখের রোগ থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ : ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাতের ভারসাম্য বজায় রেখে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এ ছাড়া, রেটিনার কাছাকাছি অঞ্চলটি ডিএইচএ (DHA) নামক এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড দ্বারা তৈরি হয়। তাই স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল জাতীয় সামুদ্রিক মাছ খাওয়া চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ডিম : ডিম অতি জরুরি অ্যামিনো অ্যাসিড, পানি এবং চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন দ্বারা সমৃদ্ধ একটি খাবার। এ ছাড়া ডিমের কুসুম লুটেইন এবং জিক্সাথিনের একটি ভাল উৎস যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে উপকারী।
বাদাম : বাদাম স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-ই এর একটি বড় উৎস, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া গবেষণায় আরও জানা গেছে যে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ বাদাম খাওয়া বয়স-সম্পর্কিত ছানি গঠন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে অবশ্যই প্রতিদিন এক মুঠো নানা ধরনের বাদাম খাওয়া উচিত।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে দুগ্ধজাত খাবার : দুধ এবং দই চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য খুবই উপকারী। দুগ্ধজাত এসব খাবার ক্যালসিয়াম আর ফসফরাস ছাড়াও জিংক এবং ভিটামিন এ দ্বারা সমৃদ্ধ থাকে। ভিটামিন এ কর্নিয়াকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং জিংক লিভার থেকে চোখে ভিটামিন এ পরিবহন করতে সাহায্য করে। জিংক রাতের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে এবং ছানি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
মিষ্টি আলু : মিষ্টি আলু দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুতে জিক্সানথিন এবং লুটেইন ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং চোখ থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে দেয়।
ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার : কমলা, লেবু, বেরির মতো সাইট্রাস ফলগুলো ভিটামিন সি-তে ভরপুর যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ভিটামিন-সি একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্ষতিকারক অক্সিজেন র্যাডিকেলগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং চোখের পেশীগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি চোখের মধ্যে উপস্থিত রক্তনালির স্বাস্থ্য উন্নতিতেও সাহায্য করে।