যৌন হয়রানি : শিক্ষকের ভয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ ছাত্রীর

মাদারীপুর প্রতিনিধি |

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় সরকারি শেখ হাসিনা একাডেমি অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। তবে ঘটনার দুই মাস হতে চললেও কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে ভয়ে ওই ছাত্রী কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। 

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও পাঁচবার বিভিন্ন কারণে কলেজ থেকে শোকজ করা হয়। সর্বশেষ এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। যদিও ওই শিক্ষকের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই শিক্ষক কলেজের ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসেই ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন। গত ২৪ জুলাই ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে গেলে ওই শিক্ষক তাকে নিয়ে ক্যাম্পাসের ২০৪ নম্বর কক্ষে যান। পড়ানো শেষে ওই ছাত্রীকে আটকে রেখে তিনি যৌন হয়রানি করেন। পরে ওই ছাত্রী কৌশলে ওই কক্ষ থেকে পালিয়ে বেগম রোকেয়া ছাত্রীনিবাসে চলে যায়। এরপর ওই ছাত্রী শিক্ষকের বিচার চেয়ে ১ আগস্ট অধ্যক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। এক মাসের বেশি সময় পর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা। ১৪ সেপ্টেম্বর কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক। সেখানে তিনি এ ঘটনা পুরোটাই সাজানো এবং তাঁর বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

এদিকে ওই শিক্ষকের ভয়ে ছাত্রীনিবাস ছেড়ে বাড়ি চলে গেছে ওই ছাত্রী। মুঠোফোনে ওই ছাত্রী বলে, ‘আমি স্যারকে খুব শ্রদ্ধা করতাম। ওই দিন স্যার আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা আমি মানতে পারছি না। আমি অধ্যক্ষ ম্যাডামের কাছে বিচার চাইছি, দেড় মাসেও কোনো সুরাহা পাইনি। উল্টো অভিযোগ দেওয়ার পর স্যার আমার সহপাঠীদের কাছে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া শুরু করেন এবং আমাকে অভিযোগ তুলে নিতে ভয় দেখান। বিষয়টি আমার পরিবারকে জানালে তারা আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। আর কলেজে যেতে দিচ্ছে না।’

জানতে চাইলে ওই কলেজের অধ্যক্ষ জাকিয়া সুলতানা বলেন, ক্যাম্পাসে প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রী শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ওই ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওই ছাত্রী তার আবেদনে উল্লেখ করেছিল, সে যখন কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে চলে যাবে, তখনই যেন তার অভিযোগের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিই। তাই এ ঘটনার দেড় মাস পর আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে অবগত করেছি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পাওয়ামাত্রই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ছাত্রীর এখন আর ভয়ের কিছু নেই। সে কলেজে এলে আমরা তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে ওই শিক্ষক বলেন, ‘একজন শিক্ষকের সঙ্গে ছাত্রীর যে সম্পর্ক থাকা দরকার, আমারও সেটাই আছে। এখানে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা পুরোটাই মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কেউ ওই ছাত্রীকে দিয়ে এ কাজটি করাচ্ছে।’

এদিকে কলেজের অন্য ছাত্রীদের মধ্যেও এ বিষয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের এক ছাত্রী বলেন, ‘স্যারদের আমরা বাবার মতো সম্মান করি। কিন্তু স্যারদের এ ধরনের আচরণে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004119873046875