রহস্যে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী জান্নাতুলের মৃত্যু

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজধানীর উত্তরায় বেসরকারি ও নানা কারনে বিতর্কিত আইউবিএটি'র (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি) শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু রহস্যের কোনো কুল কিনারা হয়নি।

পরিবারের দাবি, এক মডেলের সঙ্গে পরকীয়ার জের ও যৌতুকের দাবিতে স্বামী ফিরোজ আলম মোশরাকিন তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

আর পুলিশের দাবি, জান্নাতুল স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে এবং দাম্পত্য কলহের জেরে জান্নাতুল আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় মৃতের পালক মা জিরিনা খাতুন মেয়ের স্বামী মোশরাকিন ও মডেল রুপার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।  

মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মা জিরিনা খাতুন ইতিমধ্যে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটনপুলিশ কমিশনারে কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১২ টার দিকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৭/সি নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, জান্নাতুল ফেরদৌসের বয়স যখন আড়াই বছর তখন পালক হিসেবে দত্তক নেন রিজিনা খাতুন দম্পতি। জান্নাতুল আইউবিএটিতে পড়া অবস্থায় ফেসবুকের মাধ্যমে ফিরোজ আলম মোশরাকিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তাদের পরিবারে এক কন্যা এবং ছেলে সন্তান হলেও বিয়ের পর থেকে মোশরাকিন জান্নাতুলকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালাতেন। রুপা নামে এক মডেলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে মোশরাকিনের। এ বিষয়ে পারিবারিক ভাবে কয়েকবার বসে সমাধান করা হয়। মোশরাকিন ব্যবসা করবে বলে পাঁচলাখ টাকা দাবি করে জান্নাতুলের সঙ্গে প্রায় খারাপ ব্যবহার করতেন।

মামলার এজাহারে জিরিনা খাতুন আরও অভিযোগ করেন, মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে মোশরাকিনকে সেই টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি তার পরকীয়া সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। বিষয়টি মডেল রুপা ও তার মা রেহানাকে অবহিত করা হয়। কিন্তু তারা সে বিষয়ে সমাধান না করে আমার মেয়েকে ডিভোর্স দিতে বলে। এরমধ্যে আমার মেয়ে তার স্বামীর মোবাইলে রুপা ও মোশরাকিনের কক্সবাজারের ভ্রমণের বিমান টিকিট, বেশ কিছু ছবি-ভিডিও দেখতে পায়। এছাড়া তাদের মধ্যে অনেক অনৈতিক কথাবার্তা দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এরমধ্যে মোশরাকিন আমার মেয়েকে আত্মহত্যার করতে প্ররোচনা দিতে থাকে। ১৩ ডিসেম্বর রাতে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া ও কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে মোশরাকিন আমার মেয়েকে বলে তার জীবন থেকে সরে যেতে এবং সকালে যেন তার চেহারা না দেখতে পায়। পরদিন সকালে পরিবারকে এসব কথা জানায়। তখন জান্নাতুল বলেছিল-তাকে মারপিট করা হয়েছে এবং দুই সন্তানকে বাঁচানোর অনুরোধ জানিয়ে ফোন কেটে দেয়। ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১২ টার দিকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী জিরিনা খাতুন বলেন, ঘটনার পর পুলিশ মোশরাকিনকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে জামিনে বেরিয়ে পরকীয়া প্রেমিকা রুপার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। জানতে পেরেছি তারা বিয়ে করারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে রুপার সম্পর্ক আছে। বিভিন্ন সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান। এই তালিকায় রয়েছেন সিলেটে কর্মরত কাস্টমসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গাজীপুরের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা।

উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মৃতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। মামলার তদন্ত চলছে।

অভিযোগের বিষয়ে মোশরাকিন বলেন, আমি ভুল করেছিলাম পরকীয়া করে। তবে কারাগার থেকে বের হয়ে ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছি। আমার স্ত্রী যেকোনো বিষয়ে হঠাৎ রেগে যেতেন। যেদিন সে আত্মহত্যা করল বলা হচ্ছে আগের রাতে আমার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল কিন্তু আসলে এমন কিছু হয়নি। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য তো হয়, তবে সে যে আত্মহত্যা করবে, বিষয়টি বুঝতে পারিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029139518737793