রাঙ্গাকে ‘ক্ষমা’ করতে পারছেন না জি এম কাদের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চার মাস পর জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মসিউর রহমান (রাঙ্গা)। তবে তাঁর বিরুদ্ধে দলের বহিষ্কারাদেশ এখনই প্রত্যাহার হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আইনি জটিলতাও আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনেকটা আকস্মিকভাবেই মসিউর রহমান সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদেরের কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষমা চান। সেখানে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা জানিয়েছেন, মসিউর যখন ক্ষমা চান, তখন তাঁর অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচনাতেই আসেনি। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সেলিম জাহিদ। 

কীভাবে মসিউর রহমানের ক্ষমা চাওয়ার ঘটনাটি ঘটল, সে বিষয়ে জাপার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, দীর্ঘদিন পর গতকাল সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের কার্যালয়ে জাপার সংসদীয় দলের সভা হয়। সভার পর দলের একজন কো–চেয়ারম্যান মসিউর রহমানকে নিয়ে জি এম কাদেরের কক্ষে যান। এ সময় সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন, ফখরুল ইমাম ও সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য শেরিফা কাদেরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একজন নেতা বলেন, মসিউর রহমান কক্ষে ঢুকেই জি এম কাদেরকে সালাম দিয়ে বলেন, ভুল-ত্রুটি যা হয়েছে, সেটা ভুলে গিয়ে তাঁকে যেন মাফ করে দেওয়া হয়। এ সময় জি এম কাদের কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, মাফ করার কী আছে। হঠাৎ ঘটা বিষয়টিকে এড়ানোর চেষ্টা করেন জি এম কাদের।

জাপার একজন কো–চেয়ারম্যান জানান, এ পর্যায়ে জি এম কাদের ও শেরিফা কাদেরকে ‘মামা-মামি’ সম্বোধন করে মসিউর রহমান বলেন, ‘দল করি আর না-ই করি, আপনাদের সালাম করে যাই।’ এরপর তিনি জি এম কাদের ও শেরিফা কাদেরকে সালাম করে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান ভুল স্বীকার করে জি এম কাদেরের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, আপনি (জি এম কাদের) মুরব্বি মানুষ, মনে কোনো যদি দুঃখ-কষ্ট পেয়ে থাকেন, মাফ করে দিয়েন। এ পর্যন্তই। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুতপ্ত ছিলাম। কালকে সেটা আমি ক্লিয়ার করে দিয়েছি।’

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মসিউর রহমানকে জাপার গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে জি এম কাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন। এরপর তিনি দলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বিষোদ্‌গার করলে গত ৮ অক্টোবর দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি পান মসিউর। এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মসিউর চেয়ারম্যানের বৈধতা ও তাঁর বহিষ্কারাদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতে মামলা করেন, যা বিচারাধীন।

মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার তিন দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় জাপার আরেক নেতা জিয়াউল হককে (মৃধা)। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি ৪ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার আবেদন করেন তিনি। ৩০ অক্টোবর আদালত জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরকে দলীয় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। সেটি এখনো বলবৎ।

জাপায় রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরকে ঘিরে যে বিভেদ, তাতে জিয়াউল হক ও মসিউর রহমান দুজনই রওশনের পক্ষের নেতা হিসেবে পরিচিত। হঠাৎ ব্যাংকক থেকে রওশন এরশাদের জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করা, এর রেশ ধরে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, পরিস্থিতি সামাল দিতে জিয়াউল হক ও মসিউর রহমানকে বহিষ্কার করা, এরপর জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দুজনের মামলার ঘটনা দলের শীর্ষ নেতৃত্বে চরম তিক্ততার সৃষ্টি করে।

এরই মধ্যে গতকাল রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে জাপার সংসদীয় দলের সভা হয়। সভায় ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদসহ ১৮ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

জাপার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, সংসদীয় দলের সভায় জাপার অন্তর্বিরোধের সাম্প্রতিক নানা ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। শেষে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। রওশন এরশাদের সভাপতিত্বে প্রায় দুই ঘণ্টার এ সভায় অনৈক্য ও ভুল-বোঝাবুঝি ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সভা শেষে রওশন এরশাদ বলেন, ‘সবাইকে এক থাকতে বলেছি। ঐক্যবদ্ধ থেকে সবাইকে কাজ করতে বলেছি। আগামী নির্বাচনে আমরা এককভাবেই অংশ নেব, সেভাবে সবাইকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছি। সংসদেও সবাই যেন উপস্থিত থেকে গঠনমূলক আলোচনা করেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় গঠনমূলক কথা বলেন, সেই নির্দেশনা দিয়েছি।’

জাপার সূত্র জানায়, মসিউর রহমান মৌখিকভাবে চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চাইলেও তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আইনি জটিলতাও আছে। কারণ, মসিউর রহমানকে ৮ অক্টোবর দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে যে অব্যাহতি দেওয়া হয়, সেটি দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভার সিদ্ধান্ত ছিল। এখন এই অব্যাহতি প্রত্যাহার করতে গেলেও প্রেসিডিয়ামের সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জাপার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রেসিডিয়াম সভা আহ্বান করেন দলের চেয়ারম্যান। কিন্তু আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণে চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের প্রায় তিন মাস ধরে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম করতে পারছেন না। ফলে মসিউর রহমানের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচনাতেই আসছে না।

অবশ্য মসিউর রহমান বলেছেন, ‘উনি (জি এম কাদের) ইচ্ছা করলে সবাই করতে পারেন। আর অনিচ্ছায় কিছুই হবে না।’

জাপার দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার অথবা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রমে যুক্ত হবেন না জি এম কাদের। ফলে দলের ঐক্যের স্বার্থে জিয়াউল হক বা মসিউর রহমানকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে জি এম কাদের একমত হলেও তা তিনি কার্যকর করতে পারছেন না। কারণ, তাঁর কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এ বিষয়ে মসিউর রহমান বলেন, ‘মামলা তো করছে মৃধা (জিয়াউল হক)। মৃধার সঙ্গে এখন আলোচনা করতে হবে...তারপরে।’ মামলা তো আপনিও করেছেন—জবাবে মসিউর রহমান বলেন, ‘আমার মামলা তো এখনো আসেনি (আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায়)।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034079551696777