ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি আজ বুধবার একই সময়ে রাজধানীতে মাত্র এক কিলোমিটার ব্যবধান দূরত্বে বড় কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীতে দেখা গেছে রাজনৈতিক ‘উত্তাপ’। সকাল থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জমায়েত হচ্ছেন। সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ ঘোষণা করবে দলটি। এদিকে, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে বিএনপিকে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগকে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। এমন অবস্থায় রাজধানীতে রাজনৈতিক উত্তপ্ত বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ও বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট সংলগ্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সাদা পোশাকে কাজ করছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ বলছে, সমাবেশের নামে পরিবহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি, লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল কিংবা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এমন কাজ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। বুধবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর শনিরআখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, শিক্ষা ভবনসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে যানবাহনের চাপ কম দেখা গেছে।
বিএনপি আজ নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। রাজধানীর ১২টি জায়গা থেকে যুগপৎভাবে একই ঘোষণা দেবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এবি পার্টিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোট।
সরকার পতনে সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে না বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব বিএনপির আন্দোলনে না থাকার কথা নিশ্চিত করেছে। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে দলটি।
সমাবেশ ঘিরে যেকোনো সংঘাত-সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘রাজনীতিকরা কী উদ্দেশ্যে এসব করছেন, তা বোধগম্য নয়। রাজপথে কখনও কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি, হবেও না। এখানে এক পক্ষের সাময়িক পরাজয় হতে পারে; কিন্তু পরক্ষণেই আবার তারা উঠে দাঁড়াবে। রাজনীতি হচ্ছে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বের করা। এর জন্য কিছু নিয়মনীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা রয়েছে।’
দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে অপরাজনীতি এবং চর দখলের প্রচেষ্টা আখ্যায়িত করে বদিউল আলম বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপে যে কোনো সময় পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়তে পারে। পরিস্থিতি সহিংসতায় রূপ নিয়ে জানমালের বড় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি, দু’পক্ষ রাজনীতিকে খেলা বা যুদ্ধের ময়দান না বানিয়ে সমস্যা সমাধানে হাঁটার ক্ষেত্রে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে।’