দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : রাজধানীর সড়কে যেদিকে চোখ যায় যেন ধুলোর রাজ্য। পর্যাপ্ত পানি ছিটিয়ে এই ধুলোবালি কমাতে তেমন কোনো কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে যত্রতত্র চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে অ্যালার্জি, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া যারা চলাচল করে নগরীতে, তারা খুবই অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়ে। বাসা থেকে পরিষ্কার কাপড় পরে বের হয়ে অফিস পর্যন্ত যেতেই তা নোংরা হয়ে যায়। হাত, মুখ, চুল ও পোশাক ধুলার আস্তরণে ঢেকে যাওয়ার অবস্থা। অফিস শেষে বাসায় ফিরতে আরেক প্রস্ত ধুলা পড়ে পোশাকের অবস্থা হয়ে যায় করুণ। এ কারণে এক পোশাক দুদিন পরার মতো অবস্থায় থাকে না। কেউ সাহসও করেন না। ফলে পোশাক পরিষ্কার করতে হয় প্রতিদিন, সেই সঙ্গে ইস্ত্রি করাসহ খরচ বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা দিয়ে আসা-যাওয়ার পথে মানুষ ধুলায় একাকার হয়ে যাচ্ছে। একই চিত্র উত্তরা, গাবতলী-মোহাম্মদপুর-বাবুবাজার বেঁড়িবাধ সড়কেও।
মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি প্রকল্পের কারণেও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে নর্দমা, সড়ক ও সেবা সংস্থার প্রয়োজনে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বাড্ডার বিভিন্ন সড়ক, মিরপুর, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। আর ধুলা প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করেই নির্মিত হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি ভবন; এসব ভবনের ইট, পাথর, বালু থেকে প্রচুর ধুলা ছড়াচ্ছে। পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকেও প্রচুর ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে।
মিরপুরের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন জানান, এলার্জির কারণে বাসা থেকে বের হতে পারি না। ধুলোবালি নাকে ঢুকতেই হাঁচি শুরু হয়ে যায়। আমার মতো এই সময়ে ঢাকার হাজার হাজার মানুষ ধুলা-দূষণে নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসা বাবদ প্রচুর অর্থও খরচ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় অতিরিক্ত গাড়ি, অতিরিক্ত মানুষ ও নিয়মকানুন না মেনে উন্নয়নকাজ করায় ধুলা-দূষণ বাড়ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার অবহেলার কারণে ধুলা-দূষণের মাত্রা বাড়ছে। তবে সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় ধুলা-দূষণ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। অর্থনৈতিক উন্নতির পাগলা ঘোড়ার পেছনে না ছুটে পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিবেচনা করে উন্নয়ন করলে তাতে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। এ জন্য সরকারকে এসব দিক বিবেচনা করে উন্নয়নকাজ করতে হবে। ঢাকার ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে নিয়ম মেনে কাজ করলে ধুলাদূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে তত্পর হতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, প্রতিদিন দুটো আধুনিক মানের গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। এ ছাড়া সমন্বয়সভা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও অংশীজনদের ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণে তত্পরতা চালানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছেরের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।