দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা আব্বাস আলী। দুই মেয়ে, ছেলে আর স্ত্রী মোট পাঁচ জনের সংসার। চাকরি করতেন গুলশানের একটি আইটি ফার্মে। করোনার সময় চাকরি চলে যায় তার। এরপর চাকরি করেছেন একটি কল সেন্টারে। শেষমেষ কুলিয়ে উঠতে না পেরে নিজের শখের বাইকে এখন ফুলটাইম রাইড শেয়ার করেন তিনি। আয় ২০-২২ হাজার টাকা। এই টাকায় সংসার চালানো, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানো রীতিমত অসম্ভব আব্বাসের জন্য। তিনি এসেছেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিচালিত ‘সূলভ মূল্যের দোকানে’ ফ্রিজিং ভ্যানে গরুর মাংস কিনতে।
আব্বাস জানান: সেদিন নামার বাজারে গিয়ে জানতে পেরেছেন মোহাম্মদপুর বসিলা রোডে সরকার ৬০০ টাকা প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি করছে। তাই গতকাল এসেছিলেন, কিন্তু শেষ হয়ে যাওয়ায় পাননি। তাই আজ সকাল সকাল এসেছেন যদি গরুর মাংস পাওয়া যায় সেই আশায়। বললেন, বাজারে গরুর মাংস ৭৮০ টাকা। আলু ভর্তা, ডাল দিয়ে খেয়েও এ বাজারে টিকে থাকা কষ্ট। সেখানে গরুর মাংসের কথা চিন্তাই করা যায় না। বাচ্চারা গরুর মাংস খেতে চাই। তাই বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এসেছি এককেজি গরুর মাংস নেবো।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মতো এমন রাজধানীতে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীও রমজান মাস উপলক্ষে দাম কমিয়েছেন গরুর মাংসের। শাহজাহানপুরের খলিল, মিরপুরের উজ্জলের মতো মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি মাংস বিক্রি করছেন ৫৯৫ টাকা দরে। কিন্তু এখনও রাজধানীর অধিকাংশ জায়গায় মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। গত কয়েকদিনের বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বিক্রেতাদের কেউ কেউ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিজি করছেন, কেউ কেউ দাম হাঁকছেন কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা। অনেক জায়গায় আবার ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিদরে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মোহাম্মদপুরহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়।বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিক্রেতারা এখন কেউ কারও কথা শোনার মতো অবস্থায় নেই।একেকজন একেক দরে মাংস বিক্রি করছেন। বিক্রির ধরনের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ করে ঢাকার বাজারে ব্যবসায়ী ও খামারিরা দামে ছাড় দিয়ে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তখন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। গত ডিসেম্বরে ঠিক করা ওই দাম কার্যকর থাকে জাতীয় নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত। এরপর বাজারে গরুর মাংসের দাম আবার বাড়তে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের সময় গরুর মাংসের দাম ওঠে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা।
অতীতে মাঝেমধ্যে পবিত্র রমজানের আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিত। দুই বছর ধরে মাংস ব্যবসারীরা নিজেরাই মাংসের দাম ঠিক করেছেন, যা খুচরা বিক্রেতারা অনুসরণ করতেন তবে এখন বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।এ নিয়ে বিক্রেতারাও খানিকটা বিভ্রান্ত।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের গাড়িতে যে পরিমাণ (১০০ কেজি) গরুর মাংস দেওয়া হচ্ছে তাতে চাহিদা মিটছে না। বিক্রি শুরু দু’ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব পণ্য। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি কার্যকরী ভূমিকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
যেসব স্থানে সূলভমূ্ল্যের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে
নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (শিকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) কাকরাইল। আর স্থায়ী পাঁচটি বাজারগুলো হলো; মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর, কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)।