দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : স্বাস্থ্য খাতের নৈরাজ্য থামাতে মাঠে নেমেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। নিজেও ঝটিকা অভিযানে যাচ্ছেন। কোথাও কোনো অব্যবস্থাপনা দেখলে তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। পাশাপাশি রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শনে ছয়টি টিম গঠন করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার থেকে টিমগুলো মাঠে নেমেছে। সারা দেশে একযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের অংশ গতকাল রাজধানীর ছয়টি হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় প্রবেশ পথে লাইসেন্সের কপি ও তথ্য কর্মকর্তার নাম প্রদর্শন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাতে এত অসঙ্গতি, এর কোনোটার দায়ই মন্ত্রী হিসেবে এড়ানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, ওষুধ ও হার্টের রিং, উভয়ের দাম নির্ধারণেই বৈঠক বসেছে। তবে দাম কমাতেই হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে, যে কোনো দিন মন্ত্রী হিসেবে আমি নিজেও অভিযানে যাব। অভিযানে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে চিকিত্সাসেবা নেওয়া মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, ভুল জায়গায় চিকিত্সা নেওয়ার চেয়ে চিকিত্সা না নেওয়া ভালো। সঠিক জায়গায় চিকিত্সা নেওয়া উচিত।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংকগুলো পরিদর্শনে ছয়টি আলাদা টিম গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এসব টিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অধিদপ্তরের ১০ নির্দেশনা মানছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে সারা দেশের সব লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক বিধি মোতাবেক জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করার জন্য সব বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এলাকায় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক রয়েছে, যা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এলাকায় সব হাসপাতাল, ক্লিনিক পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।
ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, মঙ্গলবার থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। রাজধানীতে ১৮টিতে অভিযান চালানো হয়েছে, এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। সারা দেশেই একযোগে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে মন্ত্রীর নির্দেশনার পর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় লাইসেন্সের কপি ও তথ্য কর্মকর্তার নাম প্রবেশ মুখে প্রদর্শন করা হচ্ছে। গতকাল ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালের সামনে লাইসেন্সের কপি ও তথ্য কর্মকর্তার নাম প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। তথ্য কর্মকর্তার দেওয়া নম্বরে ফোন করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ফোন ধরেন এবং তথ্য প্রদান করেন। সবগুলো হাসপাতালে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের জন্য সরকারের জারি করা ১০ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী লাইসেন্সের কপি ও তথ্য কর্মকর্তার নাম প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা আগে ছিল না। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রবেশপথে টানানো, তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও লেবার রুম প্রটোকল বাধ্যবাধকতাসহ ১০ দফা নতুন নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে এসব নির্দেশনা আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে বলেও জানায় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।