দৈনিক শিক্ষাডটকম, বুয়েট: ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। বুধবার (৩ এপ্রিল) বুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত দুইদিনে শিক্ষার্থীরা বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে ও বিপক্ষ নিরীক্ষণে অনলাইনে ভোট নিয়েছেন। এতে ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে ভোট প্রদান করেছেন। অনলাইন ভোট প্রক্রিয়ায় ৫ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসে বর্তমানে রাজনৈতিক মহল দ্বারা প্রভাবিত হাতেগোনা গুটিকতক বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছেন। প্রমাণ ছাড়া এমন বানোয়াট অভিযোগের তীব্র নিন্দা জানায় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তারা ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা থেকে সরে এসে বৃহত্তর স্বার্থকে গ্রহন করবে।
৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা জানান, গত দুইদিন ধরে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে ও বিপক্ষ নিরীক্ষণের জন্য আমরা আমাদের নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল ব্যবহার করে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করি। অনলাইন ভোট প্রক্রিয়ায় ৫ হাজার ৮৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এতে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে সাক্ষর করেছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মতামত দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে হওয়া আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন গোষ্ঠী মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দাবির বিপরীতে অনেক মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়েছে। সআমরা জেনেছি, আজ বুয়েট ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থান স্পষ্টকরণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহাবস্থানের দাবিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এতে সংগঠনটি বলছে, ‘ছাত্রদল একটি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি চর্চায় বিশ্বাসী। ছাত্রদল বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে। আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীরা, ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এই সংকটপূর্ণ মূহুর্তে ছাত্রদলের এমন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি। ‘রাজনৈতিকভাবে মদদপুষ্ট সংহতি’ কে আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করছি।
তারা আরও বলেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে তখনও আমাদের তৎকালীন অগ্রজ ব্যাচ "পৌনঃপুনিক ১৫" তাদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে এবং ভিসি ও DSW স্যার বরাবর তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখনও এর প্রতিবাদ জানাই এবং সামনেও আমরা ক্যাম্পাসে সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখবো। পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনের দাবি এবং অবস্থানকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তবে আমরা তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করবো।
আমরা যেকোন ধরনের রাজনীতির বিরুদ্ধে উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দলের ও মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি এবং মৌলবাদী দলসমূহের বিপক্ষে আছি এবং থাকবো। আমাদের এই অবস্থান সকল দল ও মতের ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, বুয়েটে বর্তমানে কোন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম নেই। পাশাপাশি আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ন।