রাজনীতির নামে শিক্ষার্থী নির্যাতনে হাইকোর্টের উদ্বেগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নির্যাতন ও র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, কিছু শিক্ষার্থী ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নষ্ট করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং বন্ধে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী প্রথমবর্ষে ভর্তির সময় ওই শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিতে হবে র‌্যাগিংয়ের মতো কাজে যেন জড়িত না হয়। র‌্যাগিংয়ের মতো কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে বহিষ্কার করা হবে এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনার বিষয়ে আদেশ দেয়ার সময় বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

পরে আদালত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম  অবিলম্বে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন, ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা খবরে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্টভাবে আবাসিক হল ও হোস্টলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। কলেজজীবন পেরোনোর সময় তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে নিষ্পাপ শিক্ষার্থী, বিশেষত নবাগতদের নির্যাতন করে। এ ধরনের অবাধ্য ছাত্ররা শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে, এমনকি দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করে। এর মাধ্যমে তারা দলের ভাবমূর্তি ও ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নষ্ট করছে।

আদেশকালে আদালত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্ট (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন) পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা উদ্বিগ্ন, অন্য সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে। অনেক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ের অপব্যবহার করে কেউ কেউ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নষ্ট করে দিচ্ছে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করো-এসব কথাও উঠতে পারে। তবে ছাত্ররাজনীতির যে প্রয়োজন, সেটি আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে দেখেছি। কিন্তু এটাকে নষ্ট করার জন্য, ক্ষুণ্ন করার জন্য অনেকে না বুঝে করে, অনেকে বুঝে করে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। তার সঙ্গে ছিলেন আজগর হোসাইন তুহিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মুহসীন আদালতের বরাত দিয়ে বলেন, আদালত সুষ্পষ্ট অবজারভেশন (পর্যবেক্ষণ) দিয়ে বলেছেন, ছাত্ররাজনীতির একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীত আছে, ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসকে ব্যবহার করে রাজনীতিকে কলঙ্কিত করছে, এটা ছাত্ররাজনীতির জন্যও খারাপ, শিক্ষার্থীদের জন্যও খারাপ। আদালত বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, নির্দিষ্টভাবে বললে আবাসিক হল ও হোস্টেলে কিছু উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপ্রত্যাশিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন। এসব শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থী বিশেষ করে নবাগতদের নির্যাতন করেন। এ ধরনের অবাধ্য ছাত্ররা শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করেন। এমনকি তাদের দলীয় শৃঙ্খলাও ভঙ্গ করেন। এর মাধ্যমে তারা দলের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত করছেন।

তিনি আরও জানান, আদালত একপর্যায়ে বলেন, বিচার তো আমরা করছি না। বিচার করবে বিশ্ববিদ্যালয়, তারা রিপোর্ট (তদন্ত প্রতিবেদন) পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা উদ্বিগ্ন অন্য সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে। অনেক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়ের অপব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ঘটনাও ঘটছে। ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নষ্ট করা হচ্ছে। এভাবে চললে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করো- এমন কথাও উঠতে পারে। তবে ছাত্ররাজনীতির যে প্রয়োজন, সেটি ইতিহাস থেকে দেখেছি। কিন্তু এটাকে নষ্ট করার জন্য, ক্ষুণ্ণ করার জন্য, অনেকে না বুঝে করেন, অনেকে বুঝেও করেন। এটা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

এদিন, শুনানি শেষে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সিলগালা করে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িত শিক্ষার্থী, অবহেলা করা হল প্রশাসনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ও ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028460025787354