রাজশাহী কলেজে শিক্ষার্থী নির্যাতন : ৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কার

রাজশাহী প্রতিনিধি |

দেশসেরা রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে গড়া টর্চার সেলে সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. সিরাম মুবিন সবুজ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলেন- নগর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক শাহরুখ আলম, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কাওসার আজম রাফি, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাজু আহম্মেদ ও রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কর্মী ওয়ালিউর রহমান রিফাত। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী। এদের প্রত্যেককে মহানগর শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, আমরা যারা ছাত্রলীগ করি সাধারণ ছাত্রদের ভালোর জন্যই করি। তাদের পড়াশোনা এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করাই আমাদের কাজ। ছাত্রলীগের প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও এমন দিকনির্দেশনাই ছিল। যারা ছাত্রলীগ করে সাধারণ ছাত্রদের আঘাত করবে বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তারা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থার মধ্যে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, তারা (বহিষ্কৃতরা) ইতোপূর্বে এ রকম কাজ মনে হয় করেনি। আমরা তাদের কাউন্সিলিং করব, তারা যদি তাদের আচরণ শোধরায় তবে অবশ্যই আমরা বহিষ্কারাদেশ তুলে নেব।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি জোর করে দলীয় প্রোগ্রামে নিতে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) দুই শিক্ষানবিশ রিপোর্টার শরিফুল ইসলাম ও সাকিবসহ অন্তত ৩০ সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলাকারী শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান, আহসানসহ সবাই রাশিক দত্তের অনুসারী বলে জানা যায়।

পরে বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) ও রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তকে। এ সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত সুপারিশ করতে প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি রাশিক।

অভিযোগ ওঠে, কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংসহ দলীয় কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। যেতে না চাইলে মারধরসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মা-বাবা তুলে গালিগালাজসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হন প্রতিনিয়তই।

এ ঘটনায় সাংবাদিকদের নিয়ে ছাত্রাবাস পরিদর্শনে গিয়ে ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়েন কলেজ অধ্যক্ষ। এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষ, ছাত্রাবাসের সুপারসহ সাংবাদিকদেরও প্রকাশ্যে হুমকি দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

তবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সামনে কলেজ অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক এবং ছাত্রাবাস সুপার ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক। পরে কলেজ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের ডাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রুমে ফিরে যায়।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা চালায় রাশিক দত্তের অনুসারী ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা। পরে দেড় বছর নেতৃত্বহীন থাকার পর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন রাশিক দত্ত ও আশরাফুল ইসলাম জাফর। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই নানা অপকর্মে সমালোচিত হন রাশিক।

সম্প্রতি কলেজ হোস্টেলের কক্ষে মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন রাশিক দত্ত, যা জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া সালাম না দেওয়া, দেখে না দাঁড়ানো, মিছিলে না আসা, প্রোগ্রামে না যাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ও হোস্টেলে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বলে রাশিক ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030741691589355