রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৯ কর্মকর্তার পদোন্নতি বাতিল, অর্থ ফেরতের নির্দেশ

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত করা হয় ৫ বছর পর। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের এই পদোন্নতির আদেশ স্থগিত করেছে। এ ছাড়া পদোন্নতির পর এ পর্যন্ত তাঁদের গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৫ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আক্তার উননেছা শিউলী এক চিঠিতে প্রথমে ৬ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত করে তাঁদের গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে ১৯ মার্চ আরও ৯ জনের ব্যাপারে তিনি একই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি ইস্যু করেন। গতকাল সোমবার এই চিঠি পেয়েছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর।

এর আগে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্তে ১৫ কর্মকর্তার পদোন্নতিতে অসংগতি উঠে আসে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগের আলাদা দুই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ থেকে ২৫ নভেম্বর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে সরেজমিনে এ বিষয়ে তদন্ত করে।

গত বছরের জানুয়ারিতে এ কমিটি দুদক ও মাউশিতে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ওই ১৫ কর্মকর্তার পদোন্নতি স্থগিত এবং গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর পদোন্নতি স্থগিত এবং গ্রহণ করা অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক দুই চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ও অধ্যাপক মো. মোকবুল হোসেনের আমলে পদোন্নতির এসব অনিয়ম ঘটে। দুদফায় ১৫ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে নানা অনিয়ম করেছেন তাঁরা। সিলেকশন কমিটিও নিয়ম না মেনে তাঁদের পদোন্নতির সুপারিশ করেছিল বলে তদন্তে উঠে আসে।

প্রথমে ৯ জন সপ্তম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পান ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে। এঁদের পদোন্নতি দিতে সিলেকশন কমিটি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে ৪৮ জন কর্মকর্তার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে। 

কমিটির সভাপতি ছিলেন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। ৪৮ জনের মধ্যে কমিটি ৯ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করলে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

শুধু মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ৯ জনের পদোন্নতির তালিকাটি করা হয়। ওই মেধাতালিকা থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোকবুল হোসেন আরও ৬ জনকে পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি দেন। প্রথমে বিতর্কিত ওই মেধাতালিকার ১ থেকে ৯ নম্বর ক্রমিকের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও দ্বিতীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ ক্রমিক অনুসরণ করা হয়নি।

এই ৬ জনের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে শিক্ষা বোর্ডকে বলা হয়েছে, এঁদের পদোন্নতির আদেশ স্থগিত করে তার প্রমাণক মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগে পাঠাতে হবে। পদোন্নতি পাওয়ার পর এই কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেডে বেতন নিলে গৃহীত অতিরিক্ত অর্থ তাঁদের কাছ থেকে আদায় করে শিক্ষা বোর্ডের কোষাগারে জমা করতে হবে। এই কর্মকর্তারা বাড়তি কত টাকা নিয়েছেনম তা চিঠিতে উল্লেখ নেই।

তবে আগের ৯ জনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের চিঠিতেই বলা হয়েছে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল পর্যন্ত প্রত্যেকে ৩৭ হাজার ১০৮ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন। মোট টাকার পরিমাণ ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭২। তাঁদেরও পদোন্নতি স্থগিত করে সমুদয় অর্থ ফেরত নিয়ে বোর্ডের কোষাগারে জমা করতে হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘গতকাল সোমবার আমি ই-মেইলে মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। এটি এখন আমি ফাইলে তুলব। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক যে পদক্ষেপ, সেটা আমরা গ্রহণ করব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপক হচ্ছেন যারা ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha মসজিদ ইবাদাতের পাশাপাশি জ্ঞানচর্চারও একটি কেন্দ্র হতে পারে: ঢাবি উপাচার্য ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের পরিদর্শক আবুল মনছুর ভূঁঞার ঘুষ বাণিজ্য দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030989646911621