রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ সংবলিত একটি উড়োচিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২ অক্টোবর) ওই উড়োচিঠি পেয়েছেন বলে জানান কয়েকজন শিক্ষক।
চিঠির শুরুতে 'দুর্নীতির বরপুত্র রাজাকার পরিবারের প্রফেসর সুলতান' লিখে বলা হয়েছে, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ০১/০২/১৯৭১ইং ২৮/১১/১৯৭১ ইং রাজাকার সোলায়মান সরকারের আপন ছোট ভাই সুলতানুল ইসলাম বর্তমান উপ-উপাচার্য রাবি। বাংলা বিভাগের প্রয়াত শিক্ষক সজিত সরকার তার বই নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের পৃষ্ঠা ৩৮৫ থেকে ৩৮৮ পৃষ্ঠায় রাজাকার পরিবার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের সময় টিপুর বড়ভাই সহ তার পরিবার দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকার অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে।"
এরপর 'নীতিকথার আবিষ্কারক টিপু সুলতান' লিখে ১৫টি অভিযোগ লেখা হয়েছে। সেগুলো হলো, "১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়ার পুকুরে রাতে জেলেদের দিয়ে মাছ চুরি করে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে নেওয়ার সময় কাজলা গেটে গার্ডের হাতে ধরা খায়, এবং প্রক্টরের কাছে মুচলেকা দিয়ে বেঁচে যান।
২. রাবি বুদ্ধীজীবি স্মৃতি ফলকের ১৪০০ কেজি তামা ব্যবহারের কথা থাকলেও মাত্র ৪৯২ কেজি তামা ব্যবহার করে বাকী তামা খেয়ে ফেলে, এবং মূল নকশায় বঙ্গবন্ধুর কোন মুরাল যুক্তের কথা না থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে বঙ্গবন্ধুর মুরালটি বিতর্কিত যায়গায় স্থাপন করেন রাজাকারের ভাই নব্য আওয়ামীলীগার রাজাকার পুত্র প্রফেসর সুলতান।
৩. প্রফেসর সুলতান রাবির পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক থাকা অবস্থায় হেকেপের প্রজেক্টের দুর্নীতির জন্য ও তার বিভাগের ছাত্র ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এস. এম. সাফিউজ্জামান তার নামে মামলা করেন, এবং নিজের ফেসবুক থেকে সাতপর্বে ২৮, ৩০শে জানুয়ারী ও ০২ ফেব্রুয়ারী ২০১০ ইং এই লিংকে https://www.facebook.comprofile php hd-100002657497940&m bextid 20Boc fox res সংযুক্তিসহ প্রকাশ করেন। যিনি সামান্য টিএ ডিএর টাকায় নয় ছয় করেন, যা তার ছাত্র কাম কলিগ জনাব সাফিউজ্জামান ফেসবুকে লিখেছেন।
৪) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্তরে বিনা টেন্ডারে ঘাস লাগিয়ে ও পানির টাঙ্কির নিচে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কফিশপ নির্মান করেন (যা আজও পরিত্যক্ত অবস্থায়) যা আজও কোন ব্যবহার হচ্ছেনা।
৫. সুলতান সাহেবের কন্যা সাদিয়া সুস্মিতা ইসলাম ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ভর্তি পরীক্ষায় ওয়ার্ড কোটায় লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়, তারপর সাবেক উপাচার্য আব্দুস সোবহানের সহযোগীতায় ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেও (২৩ নম্বর) তার মেয়েকে নিজে ডিপার্টমেন্টের সভাপতি থাকা অবস্থায় ভর্তি করান। পাশাপাশি নিয়ম ভেঙ্গে কৌশলে মেয়েকে রোল ২০১৯৩৬০১০৩ (০৩) বলে ভর্তি করান, যেন কেউ বুঝতে না পারে তার মেয়ে কোটায় ভর্তি হয়েছে।
৬. উপ-উপাচার্য সুলতান তার মেয়েকে বিয়ের জন্য নিজ বিভাগের শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার শর্তে জনাব মোঃ আফতাবুজ্জামান (কাউনিয়া, রংপুর)। এর সাথে চুক্তি করেছেন এর প্রেক্ষিতে গত ২১/০৯/২০২৩ তারিখে ভূতত্ত্ব খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
৭. নেশাগ্রস্থ পুত্রের লিভটুগেদার সাথীকে (হবু বউমা) নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনায় বিএনপি- জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের ব্যবহার করে ফলাফল পরিবর্তন করাচ্ছেন প্রফেসর সুলতান।
৮. রাবির ৫০ বছরের মাস্টারপ্লান না মেনে বিনা টেন্ডারে যত্রতত্র স্থাপনা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যাপক টিপু, এছাড়া কাজী নজরুল মিলনায়তন নির্মানের ১১ কোটি টাকার অনিয়মসহ বিনা টেন্ডারে খেলাধুলা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগে মালামাল ক্রয় করেন অধ্যাপক সুলতান।
৯. প্রতিটি বিভাগের সভাপতিকে ডেকে ডেকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন, আর যাদের সাথে পেরে উঠেনি তাদের সাথে নিয়োগ ভাগাভাগিতে গেছেন, যেমন উর্দু বিভাগের বিএনপি পন্থী সভাপতির সাথে ৫০/৫০ ভাগাভাগি চুক্তি করেছেন।
১০. আমি আজ ২৫ বছর যাবত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত আছি, কোন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি এতক্ষন অফিস করেননি বলে দাবি করেন প্রফেসর সুলতান। তিনি ছুটির দিনসহ সকাল ০৯ টা হতে রাত ১১ টা পর্যন্ত অফিস করেন, বিভিন্ন শিক্ষকদের ফাইল ঘেটে তাদের সমস্যা আইডেন্টিফাই করে বিপদে ফেলার হুমকি দিয়ে নিয়োগের প্ল্যানিং করতে বাধ্য করছেন।
১১. মাননীয় উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে গত ০৬.০৯.২৩ তারিখ দুপুরে প্রফেসর সুলতান প্রশাসনের কয়েকজন কর্তাব্যক্তি, কয়েকটি বিভাগের সভাপতি ও তারপন্থী কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে অবস্থিত একটি ইন্সটিটিউটের পরিচালকের অফিসে সভায় বসেন। এই সভায় ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৫০জনকে কর্মকর্তা পদে এডহক নিয়োগ, ৮০ জন মাস্টাররোল কর্মচারীকে ৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্থায়ীকরণ, শিক্ষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের (২৫-৫০ লক্ষ টাকা) ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে উপাচার্যকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই সময় একাডেমিক ভবনে সকলের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে প্রহরীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভিতরে শিক্ষক নিয়োগের মিটিং চলছে, প্রবেশ করা যাবে না।
১২. পরিসংখ্যান ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ ছাড়াই উপাচার্যকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বাধ্য করেছে প্রফেসর সুলতান এন্ড গং। বিভিন্ন বিভাগে এইভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিকল্পনা করে নিয়োগ বানিজ্যের ফাঁদ পাতছেন প্রফেসর ইসলাম।
১৩. অধিভুক্তির কোন শর্ত পূরণ না করলেও উপাচার্যের নিকট তথ্যগোপন ও অনিয়ম করে তার ভাইয়ের মালিকানার প্রতিষ্ঠান Graduate Institute of Agriculture and Technology (GIAT), Kushtia কে রাবির অধিভুক্তি পাইয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে কাজলার একটি ভাড়া বাসায় তার ভাই অবস্থান করছেন এবং শিক্ষক- কর্মকর্তা কর্মচারী পদে নিয়োগ বানিজ্যের জন্য প্রফেসর সুলতানের পক্ষে দেনদরবার করছেন। উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ভাইয়ের দুই সন্তানকে অনিয়ম করে রাবি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন প্রফেসর সুলতান।
১৪. ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রফেসর সুলতান-উল ইসলাম উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপর ভিসি হিসেবে নিজ নাম উল্লেখ করে ক্যালেন্ডার ছাপানোর জন্য ক্যালেন্ডার ছাপানো কমিটি গঠন করেন এবং ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন। এর কিছুদিন পর সরকার রাবিতে উপাচার্য পদে প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারকে নিয়োগ দিলে, তিনি এই ক্যালেন্ডার বিতরন করতে পারেননি। নতুন করে আবার ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হয়। এর ফলে ক্যালেন্ডার ছাপানো বাবদ রাবির প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা অপচয় হয়।
১৫. ২০ জুন ২০২১ তারিখে কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল ঢোকানো হয়েছে। উপ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম ৪ সদস্য বিশিষ্ট এই ক্রয় কমিটির প্রধান ছিলেন।
চিঠির শেষে লেখা রয়েছে, "একজন রাজাকার পরিবারের দুর্নীতির সুলতান এর হাতে আজ আমার প্রাণের রাবি কীভাবে নিরাপদ !!!!"
এবিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলামের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে পরে কল দিতে বলেন। পরে কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।