রাবি উপাচার্যের বাসার সামনে রাত কাটালেন অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তরা

রাবি প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসে নিয়োগপ্রাপ্তরা সিন্ডিকেট সভা স্থগিত হওয়ার পরও অবস্থান করছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে তাঁরা উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের সামনে আবার অবস্থান শুরু করেন। বুধবার সকাল ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করছিলেন।

এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিন্ডিকেট সভা ঠেকাতে সাবেক উপাচার্যের শেষ কর্মদিবসে নিয়োগপ্রাপ্তরা একই জায়গায় অবস্থান নেন। পরে বাধার মুখে রাত সাড়ে আটটার দিকে রুটিন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা সাংবাদিকদের বিফ্রিংয়ে বলেন, বাধার মুখে তাঁরা সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করেছেন। পরে নিয়োগপ্রাপ্তরা সেখান থেকে উঠে যান। আবার রাতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেখানে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। রাত ১১টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের দাবিতে গতকাল রাতে ভিসির বাসার সামনে অবস্থান করছেন। তাঁরা বিছানা পেতে কেউ শুয়ে আছেন, কেউ বসে আছেন। সকালে অবস্থানকারীদের সংখ্যা একটু কম দেখা যায়। তবে অন্যরা আশপাশেই আছেন বলে অবস্থানকারীদের দাবি।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে চাকরিপ্রাপ্ত আতিকুর রহমান সব সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন। তাঁকে সকালে পাওয়া যায়নি। অবস্থানকারীরা জানিয়েছেন, তিনি সকালে ফ্রেশ হতে গেছেন। আতিকুর গতকাল রাত ২টার দিকে বলেছিলেন, সিন্ডিকেট সভা স্থগিত হয়েছে। সিন্ডিকেট ঠেকানো তাঁদের কাজ ছিল না। তাঁদের চাকরিতে যোগদান করা দরকার। তাঁদের নিয়োগ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা একটু উদ্যোগী হলেই সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু তিনি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বললেও তাঁদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি। তাঁদের যতক্ষণ পর্যন্ত যোগদান করতে দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা অবস্থান করবেন। তাঁদের নিয়োগ আলোচিত হলেও অবৈধ নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তবে রাতেই বিফ্রিংয়ে রুটিন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বলেছিলেন, তাঁরা যে দাবি করেছেন, তা পূরণ করা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকার জড়িত।

আন্দোলনকারীরা সকালে জানিয়েছেন, রাতভর তাঁরা এখানে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে রাতভর এখানে একটু পরপর প্রক্টর এসে দেখা করে গেছেন। এ ছাড়া পুলিশ সদস্য ছিলেন। তাঁরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করেননি। তাঁরা যোগদানের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁরা এখানেই রান্নাবান্না করবেন।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি রাতে বলেছিলেন, নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে তাঁরা গত সোমবার কথা বলেছেন। সেখানে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। সিন্ডিকেট সভা স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা যোগদানের দাবিতে অবস্থান করছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, এ জন্য তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকছেন।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

সদ্য সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের শেষ দিনে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগপ্রাপ্তরা গত শনিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে নিজ নিজ পদে যোগদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। এর ফলে শনিবার ফাইনান্স কমিটির সভা স্থগিত হয়ে যায়। তাঁরা সে সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন, সিন্ডিকেট সভাও করতে দেবেন না। কিন্তু গত রোববার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপে তাঁরা রুটিন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহার বাসভবনসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভবনের তালা খুলে দেন। পরের দিন সোমবার দুপুরে স্থানীয় সাংসদ আয়েন উদ্দিন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়। সভা শেষে বের হয়ে চাকরিপ্রাপ্তরা আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তাঁরা ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাধা দেবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। তবে সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁদের ক্যাম্পাসে দেখা গেছে এবং সন্ধ্যার দিকে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে আবদুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে ৬ মে শেষ কর্মদিবসে ১৩৮ জনকে অ্যাডহকে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিয়ে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিন এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে সেদিনই বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। শেষ অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। আবদুস সোবহানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগদানের জন্য ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের দাবি, তাঁদের নিয়োগ আলোচিত হলেও অবৈধ নয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027508735656738