দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি : আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) খেলোয়াড়দের ওপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের অতর্কিত হামলায় ঢাবির ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঢাবি প্রশাসন এ ধরনের হামলাকে অখেলোয়াড়সুলভ উল্লেখ করে বিবৃতি দেয়। রাবি প্রশাসনও পাল্টা বিবৃতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে বলে দাবি করে। রাত ১ টায় খেলোয়াড়রা পুলিশ পাহারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং তারা নিরাপদে ক্যাম্পাসে আসতে পেরেছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় চলাকালীন সময়ে মাঠে এ হামলা হয়। এ ঘটনায় ঢাবির অন্তত ৬ খেলোয়াড় আহত হয়েছেন। এসময় ম্যাচ পণ্ড হয়ে গেলে আলোক স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে খেলাটি স্থগিত করে ও পরে উভয় দল ঢাবি ও রাবিকে যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে ম্যাচ রেফারি।
এ ঘটনায় ঢাবি ও রাবি শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। ঘটনা কীভাবে শুরু হয়েছিল জানতে চাইলে হামলায় আহত ঢাবি ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড় সিফাত সাদিক বলেন, ঘটনার শুরু হয়েছে প্রথম থেকেই। খেলার শুরু থেকেই রাবি শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত ছিল। আমাদেরকে অন্যমনস্ক করার চেষ্টা করছিল। খেলার মাঝে আম্পায়ারও গালিগালাজ করেছে। নো বল দেয়নি, আমাদের রাইট বল গুলো ওয়াইড দিয়েছে। তবুও আমরা যখন জেতার দ্বারপ্রান্তে তখনই ঘটনা ঘটে।
যখন আমরা জেতার দ্বারপ্রান্তে লাঠি স্টাম্প হাতে মাঠে প্রবেশ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১১ বল হাতে থাকতে যখন ২০ রান বাকি এবং নবম উইকেট পড়ে যায়। তখন তারা একত্রিত কিছু একটা আলোচনা করে এবং দর্শক সারিতে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে রাবির মাঠের খেলোয়াড় ডাক দেয়। এমন সময় সবাই দ্রুত লাঠি স্টাম্প হাতে মাঠে প্রবেশ করলে আমাদের দুই থেকে তিন জন আগেই দৌড়ে পালায় এবং আমরা মাঝখানে পড়ে যাই।
চারদিক থেকে কিলঘুষি শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, চারদিক থেকে কিলঘুষি এবং লাঠির আঘাত আমাদের উপর পড়ছিল। আমরা কোনোরকম দৌড়ে পালিয়েছি। তারপর আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি কোয়ার্টারে আতঙ্কিত অবস্থায় থাকি। আমাদের কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে তবে সবাই মার খেয়েছে। এর মধ্যে আমি সিফাত সাদিক, সাকিব, রোকনসহ আরো কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে।
ঢাবি ক্রিকেট টিমের সদস্য খেলোয়াড় নয়ন দাস সাগর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমের একজন খেলোয়াড় আমি। আমাদের উপর আজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে হামলা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ধিক্কার জানাচ্ছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ম্যানেজমেন্টকে। আমি এবং আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় আছি, তাদের জীবনের কি কোন দাম নেই? এইভাবে আপনারা আমাদের উপর হামলা করতে পারলেন কীভাবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল প্রশাসন আছে, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমাদের উপর হওয়া হামলার বিচার চাইছি।
ঢাবি একাদশের খেলোয়াড় ফারসি বিভাগের হানিফ বলেন, খেলার তখন বাঁকি ১ ওভার চার বল এবং শেষ উইকেটের খেলা চলছিলো। এমন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নেমে আসে সাথে রাবির খেলোয়াড়রাও আমাদের উপর চড়াও হয়। স্টাম্প, লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমাদের প্রায় ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন। আমরা কোনো মত পালিয়ে ড্রেসিংরুমে গেলে সেখানেও হামলার শিকার হলে আমরা দ্রুত কোয়ার্টারে চলে আসছি।
তিনি আরো জানান, আম্পায়ার মাঠের মধ্যে নানা ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন। তিনি আমাদেরকে গালিগালাজ ও করেছেন। তিনি আমাদেরকে গালি দিয়ে বলেছেন 'তোরা আজকে বাসায় যেতে পারবি না'। এছাড়া খেলার মাঝে পুরাতন বল রেখে রাবি একাদশকে নতুন বল দিয়েও সহায়তা করে আম্পায়ার আমরা সেটা ধরে ফেললে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় আর কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, এঘটনা অত্যন্ত অপ্রীতিকর এবং নিন্দনীয়। রাবি প্রশাসনের অপারগতা এখানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা খেলোয়াড়দেরকে নির্দেশনা দিয়েছি যে তারা যেন পুলিশ পাহাড়ায় আজই চলে আসে।