রাবি শিক্ষক সমিতির চিঠিতে ভুলের ছড়াছড়ি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি |

সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং আগের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি প্রকাশিত এক চিঠিতে অন্তত ৪০টি বানান ভুল ও অসংগতি দেখা গেছে। 

রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে এসব ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।

তবে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে ভুলগুলো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তিনি এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভুলগুলো শুধরে নেয়ার কথাও বলেছেন। 

 

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান অনুযায়ী, এই চিঠির ভুলগুলো হলো— ‘৩০ জুন ২০২৪, নিবেন, জারিকৃত, স্কিম সংক্রান্ত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগনের, শিক্ষকগনের, আহবানে, থেকে (এ-কারের ওপর মাত্রা দেয়া হয়েছে), ঘোষনা, নিম্নরুপ, বিভগ, ক্লাশসমূহ, অনলাইন ('অনলাইন নয়; অনলাইন ক্লাস। অন্যগুলোর সঙ্গে ‘ক্লাস’ লেখা হয়েছে), সান্ধ্যকালীন, সবধরনের, কোন, একাডেমিক ‘অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার’, ‘কমিটি, পরিকল্পনা’, ‘কমিটি, প্রশ্নপত্র’, ‘সেমিনার, কনফারেন্স’, ১১.০০-১২.০০ মিনিট, ব্যাতিত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের, স্বায়ত্ত্বশাসনে, কর্মসূচী’। একই বানান বারবার ভুল হওয়ায় পুনরাবৃত্তি এড়াতে সেগুলো একবার করে উল্লেখ করা হলো।

এই অসংগতি ও ভুল বানানগুলোর প্রমিতরূপ হলো— ‘৩০ শে জুন ২০২৪, নেবেন, জারীকৃত, স্কিমসংক্রান্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বা বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকগণের, শিক্ষকগণের, আহ্বানে, ঘোষণা, নিম্নরূপ, বিভাগ, ক্লাসসমূহ, সান্ধ্য বা সন্ধ্যাকালীন, সব ধরনের, কোনো, অ্যাকাডেমিক ‘অফিস, সেমিনার, কম্পিউটার’, ‘কমিটি, পরিকল্পনা’, ‘কমিটি, প্রশ্নপত্র’, ‘সেমিনার, কনফারেন্স’, ১১.০০-১২.০০টা, ব্যতীত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বা বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকদের, স্বায়ত্তশাসনে, কর্মসূচি।

এই চিঠিতে যে ভুলগুলো হয়েছে তার মধ্যে কিছু ভুলের ব্যাখ্যা নিচে দেয়া হলো—

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের পরিশিষ্ট ‘গ’-এ বাংলা তারিখ ও সময় লেখার নিয়ম বিধৃত হয়েছে। বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হয়েছে: অ্যাক বৈশাখ, অ্যাগারো জ্যৈষ্ঠ, শোলো ডিসেম্বর, পোঁচিশ বৈশাখ প্রভৃতি উচ্চারণ অশুদ্ধ। শুদ্ধ ও মান্য রীতি: পয়লা বৈশাখ, অ্যাগারোই জ্যৈষ্ঠ, শোলোই ডিসেম্বর, পোঁচিশে বৈশাখ প্রভৃতি। চিঠিতে সব জায়গায় ‘১লা জুলাই’ লিখলেও ‘৩০ জুন’ লেখা হয়েছে। যা এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। 

 

শব্দের শেষে করণ, কৃত, ভবন, ভূত প্রভৃতি প্রত্যয় যুক্ত হলে সাধারণত ঈ-কার আগম হয়। যেমন: আত্ত, কিন্তু আত্তীকরণ, আত্তীকৃত, আত্তীভূত। দূর, কিন্তু দূরীকরণ, দূরীকৃত, দূরীভূত। বশ, কিন্তু বশীকরণ, বশীকৃত, বশীভূত। শ্রেণি, কিন্তু শ্রেণীকরণ, শ্রেণীকৃত, শ্রেণীভূত। সূত্র: বাএআবাঅ, পৃষ্ঠা: ৫১৮। সে হিসেবে ‘জারিকৃত’ না হয়ে ‘জারীকৃত’ হবে।
‘-সংক্রান্ত’ শব্দাংশের স্বাধীন ব্যবহার নেই। এটি সর্বদা অন্য শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। সূত্র: সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম। ‘সংক্রান্ত’ পূর্ববর্তী শব্দের সঙ্গে সেঁটে বসে। সূত্র: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (বাএআবাঅ), পৃষ্ঠা: ১২৬৪। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে ‘পেনশন সংক্রান্ত’। যা ভুল। সঠিক হবে ‘পেনশনসংক্রান্ত’।

সান্ধ্যকালীন’ শব্দটি ভুল, অর্থহীন ও হাস্যকর। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘সান্ধ্য’ (সন্ধ্যা+অ) শব্দের অর্থ সন্ধ্যাকালীন, সন্ধ্যাবেলার, সন্ধ্যাসম্পর্কিত। সে হিসেবে ‘সান্ধ্যকালীন’ শব্দের অর্থ হয়— যথাক্রমে ‘সন্ধ্যাকালীনকালীন, সন্ধ্যাবেলারবেলার, সন্ধ্যাসম্পর্কিতকালীন। কাজেই, ‘সান্ধ্যকালীন কোর্স’ শব্দের অর্থ হয়— সন্ধ্যাকালীনকালীন কোর্স, সন্ধ্যাবেলারবেলার কোর্স, সন্ধ্যাসম্পর্কিতকালীন কোর্স। মূলত ‘সান্ধ্য’ শব্দের অর্থ ‘সন্ধ্যাকালীন’। সুতরাং সান্ধ্যকালীন নয়; সঠিক হবে সন্ধ্যাকালীন বা সান্ধ্য।

‘কোন’ শব্দটি যখন সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন-এর অর্থ: কী, কে, কোনটি (কোন দিন, কোনটি চাই, কোন জন)। এটি কোনও বা কোনো শব্দের সমার্থক নয়। যেমন: “আপনি কোন দেশে থাকেন” বাক্যে একই অর্থ: প্রকাশের জন্য ‘কোনও’ বা ‘কোনো’ পদ ব্যবহার করা যাবে না। বাক্যে সর্বনাম ও বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘কোনো’ শব্দের অর্থ: অনির্দিষ্ট বা অনির্ধারিত একজন লোক বিষয় বা বস্তু, কে বা কী (কোনো বিষয়), বহুর মধ্যে একটি বা একজন বাএআবাঅ, পৃষ্ঠা: ৩৩৭, ৩৩৮। নোটিশে ‘কোনো’-এর পরিবর্তে সব জায়গায় ‘কোন’ লেখা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে আমাদের হয়তো কিছু ভুল হয়ে গেছে। যে ভুলগুলো দেখা দিয়েছে আমরা সেগুলো সংশোধন করে নেবো। ওটা সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন আমি ঠিক জানি না, ওনার সঙ্গে আমি কথা বলবো। আমরা এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027871131896973