রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে যেমন উত্তাপ লেগেছে তেমনি বড় প্রভাব পড়েছে পরিবহন খাতে। এ অবস্থায় বার্ষিক বাজেটে সংকট ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপাকে পড়েছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ। উদ্ভূত পরিস্থিতি সমাধানে কৃচ্ছ্রসাধনের দিকে ঝুঁকছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য ক্যাম্পাসের পরিবহন বাসগুলোকে সপ্তাহের পাঁচদিন চলাচলের শিডিউল পরিবর্তন করে দুদিনে আনা হয়েছে। পাঁচদিনের অফিস করা হয়েছে চারদিনে। যে কারণে শিক্ষার্থীদেরও ক্যাম্পাসে পাঁচদিন সশরীরে ক্লাসের পরিবর্তে দুদিন করা হয়েছে। বাকি তিনদিন অনলাইন ক্লাস নেয়ার কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে কোনো লিখিত নোটিস দেয়নি প্রশাসন। এতে শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, গত ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে পাঁচদিন সশরীরে ক্লাসের পরিবর্তে দুদিন ক্লাস নেয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা। বাকি তিনদিন অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে কোনো নোটিস দেয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্তের পর থেকে সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বুধবার ক্যাম্পাসে সশরীরে ক্লাস নিচ্ছে বিভাগগুলো। বাকি সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সশরীরে ক্লাস নেয়ার দুদিন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী পরিবহনে চারটি বাস চলাচল করছে। বাকি দিনগুলোয় পরিবহনও বন্ধ থাকে।
কয়েকটি ব্যাচের ক্লাস প্রতিনিধিরা (সিআর) জানান, মূলত ডিসেম্বরের শুরুর দিক থেকেই সপ্তাহে দুদিন সশরীরে ক্যাম্পাসে পাঠদান ও তিনদিন অনলাইন ক্লাসের কথা জানান শিক্ষকরা। তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত সেটি নিশ্চিত করে কোনো নোটিস দেয়া হয়নি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে বাসের পরিচালনা খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়, যার কারণে তেলের পাম্পগুলোয় নাকি কয়েক লাখ টাকা বকেয়া হয়ে গেছে। পরিস্থিতি সামলাতে সপ্তাহে দুদিন ক্লাস নিচ্ছে সশরীরে। বাকি তিনদিন অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে এখন। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার ক্লাস হয়। মূলত গত ৪ ডিসেম্বর থেকেই এ নিয়ম চলছে। ক্যাম্পাসে সশরীরের ক্লাস কমার একটা প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়বে, যা কভিডকালীন হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, রাবিপ্রবি প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের পরিবহনে চারটি বাস রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মিনিবাস ও একটি বড় বাস রয়েছে। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে পাঁচদিন পরিবহন চলাচলের শিডিউল কমিয়ে দুদিনে করা হয়েছে। বাকি তিনদিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী পরিবহন বাসগুলো বন্ধ থাকছে। অন্যদিকে সপ্তাহের পাঁচদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ডিউটি কমিয়ে চারদিন করায় প্রতি বৃহস্পতিবারও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকছে। তবে এ সংকট কাটাতে হলে আগামী অর্থবছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিবহন খাতের হিসাবে প্রতি মাসে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার মতো জ্বালানি ও পরিবহন খাত বাবদ ব্যয় হয়। সেখানে বার্ষিক বাজেটে ১৭ লাখ টাকা হওয়ায় অর্থ সংকটে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন খাতের কৃচ্ছ্রসাধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. সেলিনা আখতার বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দা চলছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে শিডিউল কমিয়ে দুদিনে নিয়ে এসেছি। যে কারণে সপ্তাহে দুদিন সশরীরে পাঠদান ও তিনদিন অনলাইনে ক্লাস চলবে। অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস একদিন কমিয়ে চারদিন করা হয়েছে। অফিস ও সশরীরে পাঠদান কমলেও আমরা অনলাইনের মাধ্যমে পূর্ণ কাজ করে যাচ্ছি।’ তবে কবে নাগাদ এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘আশা করছি আগামী বছরে এ সংকট কেটে যাবে। আমরা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বাজেট সংকটের বিষয়টি জানিয়েছি। আগামী অর্থবছর থেকে পরিবহন খাতের বাজেটে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হতে পারে।’