রাবির সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানকে শোকজ

রাবি প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের মেয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের প্রভাষক সানজানা সোবহানকে শিক্ষাছুটি শেষ করে যথাসময়ে যোগদান না করার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গত ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ৫২৪তম সিন্ডিকেট সভার ২৫ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি কেন শিক্ষাছুটি বাতিলের আদেশ জারি ও প্রাপ্তির পরেও দেশে না ফিরে অনুনমোদিতভাবে কোন অধিকার বলে বিদেশে অবস্থান করছেন? কেন আপনি যথা সময়ে বিভাগে যোগদান করেননি এবং কেন তদন্ত কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অসহযোগিতা ও অবজ্ঞা করেছেন এবং সিন্ডিকেটের আদেশ অমান্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এই পত্রের উত্তর প্রাপ্তির পরে আপনার বিভাগে যোগদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অভিযোগ এবং চিঠি নিয়ে সানজানা সোবহান বলেন, আমি সমস্ত নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পূর্ণ বেতনে আমার শিক্ষা ছুটিটিও মঞ্জুর করে। আমার ডিগ্রি শেষ হতে যখন সাত মাস বাকি, তখন হঠাৎ করেই আমাকে জানানো হয়, আমার ছুটিটি মঞ্জুর হয়নি; অতিসত্বর আমি যেন বিভাগে যোগদান করি।

তিনি আরো বলেন, স্কলারশিপের শর্তানুযায়ী, মাঝপথে ডিগ্রিটি ছেড়ে দিলে আমাকে প্রায় ৪২ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। তাই, পুনরায় ছুটির আবেদন করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাত মাস পর জানায়, যে তারা আমার পুনরায় করা ছুটির আবেদনটি আমলে নেয়নি। আমি গত ২৪ মে বিভাগে জয়েনও করেছি, এখন দেখছি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে।

সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি সংক্রান্ত বেশকিছু চিঠি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। চিঠিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য স্কলারশিপ পান তিনি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সই করা এক আদেশে তাকে দেড় বছরের শিক্ষাছুটি দেওয়া হয়। একই বছরের ৮ মে ছুটি চলাকালীন তার বেতন চালু রাখার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। 

২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ড. শেখ সাদ আহমেদ সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই তারিখে অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫ নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক বছর পাঁচ মাস শিক্ষাছুটি পূর্ণবেতনে মঞ্জুর করা হয়েছে। 

তবে, এর তিন মাস পর আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, তার সেই শিক্ষাছুটির আবেদন অনুমোদিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সানজানা সোবহানের পুনরায় করা আবেদনটি বিবেচনায় না নিয়ে আগের সিদ্ধান্ত বহাল আছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেয় চলতি বছরের ১০ মে। তবে শিক্ষাছুটি শেষ করে সানজানা সোবহান বিভাগে যোগদান করেন চলতি বছরের ২৫ মে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষাছুটির বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনের পর সিন্ডিকেটে যায়। তখন সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের জামাতার (এ টি এম শাহেদ জামান, শিক্ষক, আইবিএ) নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছিল। তদন্ত কমিটি সানজানা সোবহানের বিষয়েও কিছু অভিযোগ করে। পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিলেও বিষয়টি আলোচিত হয় এবং সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি স্থগিত করা হয়।

সানজানা সোবহানকে দেওয়া ২১ আগস্টের চিঠির বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওনার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তিনি সেগুলো দেবেন। এরপর সেগুলো সিন্ডিকেটে যাবে। সিন্ডিকেটে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে।

জানা গেছে, ছুটি স্থগিত করা হলেও সানজানার বেতন চালু রাখা প্রসঙ্গে কোনো চিঠি বা আদেশ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে ট্যুরিজম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সানজানা সোবহানের বেতন এবং অন্য সুবিধা চলমান আছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে সানজানা বলেন, আমি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে, সে কারণেই আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, আমি কোনো মার্ডারের আসামিও না, সব নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি; তাহলে আমার ত্রুটি কোথায়?

তিনি আরো বলেন, আর্থিকভাবেও আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শিক্ষাছুটি থেকে ফিরে আসার পর স্যালারির একটা ফিক্সেশন হয়, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমার সেটি হয়নি। আমার প্রমোশনের জন্য নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এটি বাতিল করা হয়। আমার প্রমোশনও আটকে রাখা হয়েছে।

অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান উপাচার্য থাকাকালে তার মেয়ে সানজানা সোবহান এবং জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তার মধ্যে, উপাচার্য ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে তার কন্যা ও জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, এই অভিযোগের সত্যতা থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি অবশ্য নিয়োগ স্থগিতের নির্দেশনা বাতিল করা হয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025551319122314