রাষ্ট্রদূত নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন : পররাষ্ট্র ক্যাডারে ক্ষোভ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাষ্ট্রদূত নিয়োগে গণহারে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনে পররাষ্ট্র ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা। রীতি অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রাষ্ট্রদূত পদে আগে নিয়োগ পাবেন। এক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন অনৈতিক। অপরদিকে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার কৃচ্ছ সাধনের নীতি গ্রহণ করলেও বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত আছে। একদিকে কৃচ্ছ তা, অন্যদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্ববিরোধী-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মাসুদ করিম। 

সূত্র জানায়, বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা জকি আহাদ, শাহ আহমেদ শফি, মো. লুৎফুর রহমান, শাহনাজ গাজী, ফয়সাল আহমেদ এবং শিকদার বদিরুজ্জামান জ্যেষ্ঠ হলেও তাদেরকে এখনো রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করা হয়নি। কিন্তু তাদের চেয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তা ১৮তম ব্যাচের আমানুল হক, তারেক মোহাম্মদ, সাদিয়া ফয়জুন্নেসা, একেএম শহিদুল করিম এবং ২০তম ব্যাচের মনোয়ার হোসেনকে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র ক্যাডারে বঞ্চিত ক্ষুব্ধ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, জ্যেষ্ঠতার এই সাধারণ নীতি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতি কাজ করছে কি না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই ধারা কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমশের মবিন চৌধুরী বলেন, জ্যেষ্ঠতা হলো রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগের একটি বিবেচ্য বিষয়। জ্যেষ্ঠতার বাইরেও যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচ্য।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘সমযোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তার রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের অগ্রাধিকার দেওয়া ভালো। যদিও এমন নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু পেশাদারি, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতার সম্মিলিত বিষয় বিবেচনায় নিলে কর্মকর্তাদের মনোবল ঠিক থাকে। এক্ষেত্রে যে কোনো ব্যতিক্রম কর্মকর্তাদের মনোবলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।’

বিষয়টি সম্পর্কে মন্তব্য পেতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে টেলিফোনে এবং এসএমএস পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার বলেন, ‘যুগ্ম সচিব পর্যন্ত নিয়োগ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত সচিব, সচিব, রাষ্ট্রদূত এসব নিয়োগ সরকারের পছন্দ অনুযায়ী হয়। ফলে এক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের প্রশ্নটাই অবান্তর। এসব পদে সরকার নিজস্ব বিবেচনায় মনোনয়ন দিয়ে থাকে। দক্ষতা, আস্থা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করা হয়ে থাকে।’

অপরদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধনের নীতি গ্রহণ করেছে। ফলে সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রয়েছে। তবে বিদেশি অর্থায়নে সফর করা যাবে। পরিচালন বাজেটের অধীন ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। ভবন ও স্থাপনা খাতে নতুন কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না। যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি (যেমন: কম্পিউটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থব্যয় সম্পূর্ণভাবে স্থগিত থাকবে। এভাবে কৃচ্ছ সাধন নীতি গ্রহণ করলেও বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছে। এতে সরকারের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ পড়ছে।

সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহল সুপারিশ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হলে সরকার তাকে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। তিনি এখন আরও অনেক কর্মকর্তাকে চুক্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছেন। রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান চুক্তিতে নিযুক্ত আছেন। তার চুক্তির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। পররাষ্ট্র সচিব তাকে আবারও চুক্তিতে নিয়োগের জন্য ডিও (ড্যামি অফিশিয়াল লেটার) দিয়েছেন। উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা। তিনিও পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন। শিবনাথ রায় ভুটানে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেয়েছেন। তার আগামী বছর অবসরে যাওয়ার কথা। ফলে তাকেও আগামী বছর চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031669139862061